Tuesday, 29 December 2015

মজুরি-শ্রম ও পুঁজি - কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিক এঙ্গেলস

"মজুর তার শ্রমশক্তির বিনিময়ে জীবনধারণের উপকরণ পায়, আর পুঁজিপতি তার দেওয়া জীবনধারণের উপকরণের বিনিময়ে পায় শ্রম, মজুরের উৎপাদনী ক্রিয়া, সৃজন শক্তি, যা দিয়ে মজুর যেটুকু ভোগ করে শুধু তাই সে শোধ দেয় না, সঞ্চিত শ্রমের যে মূল্য ছিল তা আরো বাড়িয়ে দেয় ।"

"মজুরির উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ধরে নেয়, উৎপাদনশীল পুঁজির একটা দ্রুত বৃদ্ধি । উৎপাদনশীল পুঁজির দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধনদৌলত, বিলাসব্যসন, সামাজিক চাহিদা ও সামাজিক উপভোগও সমান দ্রুতগতিতেই বেড়ে যায় । কাজেই মজুরের উপভোগ কিছুটা বাড়লেও তার থেকে সামাজিক পরিতৃপ্তি যে পরিমাণ পাওয়া যায় তা মজুরের কাছে যা দুর্লভ পুঁজিপতিদের সেই বর্ধিত উপভোগের তুলনায় আর সাধারণত গোটা সমাজের বিকাশের তুলনায় পিছিয়েই যায় । সমাজ থেকেই জাগে আমাদের চাহিদা ও উপভোগ; তাই সমাজের মাপকাঠিতেই আমরা তাদের বিচার করি, চরিতার্থতার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মাপকাঠিতে নয় । আমাদের চাহিদা ও উপভোগের চরিত্র সামাজিক তাই তারা আপেক্ষিক ।"

"মজুরের বৈষয়িক জীবনের উন্নতি হয়েছে বটে, কিন্তু তার সামাজিক অবস্থানের বিনিময়ে । পুঁজিপতির সঙ্গে তার যে সামাজিক ব্যবধান সেটার পরিসর আরো বেড়ে গেছে ।"

শ্রম-বিভাগ : "কাজ বেশি করে - তা অধিক সময় কাজ করেই হোক  বা এক ঘন্টায় বেশি পরিমাণ জিনিস উৎপন্ন করে হোক - মজুর তার মজুরির মোট পরিমাণটি বজায় রাখতে চেষ্টা করে । অভাবের তাড়নায় শ্রম-বিভাগের কুফল সে এইভাবে আরো বাড়িয়ে তোলে । ফলে, যত বেশি সে খাটে, ততই কম মজুরি সে পায়; তার সহজ কারণ এই যে, মজুর যত বেশি কাজ করে তত বেশি পরিমাণেই সে সহ-শ্রমিকদের সঙ্গে তার প্রতিযোগিতা বাড়ায়, ফলে সকলকেই তার প্রতিযোগী করে তোলে, তারাও তারই মতো সমান প্রতিকূল শর্তে নিজেদের বিকিয়ে দেয়; তাই শেষ পর্যন্ত সে নিজেরই সঙ্গে, শ্রমিক শ্রেণীর একজন সভ্য হিসাবে তার নিজের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা চালায় ।"

"এই যুদ্ধের বৈশিষ্ট্য এই যে, মজুর-বাহিনীকে দলভুক্ত না করে বরখাস্ত করলেই বরং যুদ্ধ জয় হয় বেশি । শিল্পের সেনাদের কে কত বেশি সংখ্যক বরখাস্ত করতে পারে এই নিয়ে সেনাপতিরা অর্থাৎ পুঁজিপতিরা পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে ।"

"উৎপাদনশীল পুঁজি যতই বেড়ে যায়, শ্রম-বিভাগ এবং যন্ত্রপাতির প্রচলনও তত প্রসার পায় । আবার শ্রম-বিভাগ এবং যন্ত্রপাতির প্রচলন যতই বেড়ে চলে মজুরদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও ততই বাড়ে, মজুরিও তত কমে যায় ।"

"পুঁজি দ্রুত বেড়ে চললে মজুরদের প্রতিযোগিতা বেড়ে যায় আরো অতুলনীয় দ্রুতগতিতে, অর্থাৎ পুঁজি যত দ্রুত বেড়ে যায় শ্রমিক শ্রেণীর উপার্জনের উৎস, জীবনধারণের উপকরণও তত বেশি কমে যেতে থাকে; তবুও মজুরি-শ্রমের পক্ষে সব চাইতে অনুকূল অবস্থা হল পুঁজির দ্রুত বৃদ্ধি ।"

No comments:

Post a Comment