"আগেকার সকল যুগ থেকে বুর্জোয়া যুগের বৈশিষ্ট্যই হল উৎপাদনে অবিরাম বিপ্লবী পরিবর্তন, সমস্ত সামাজিক অবস্থায় অনবরত নড়চড়, চিরস্থায়ী অনিশ্চয়তা এবং উত্তেজনা । অনড় জমাট সব সম্পর্কে ও তার আনুষঙ্গিক সমস্ত সনাতন শ্রদ্ধাভাজন কুসংস্কার ও মতামতকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হয়, নবগঠিতগুলো দৃঢ়সম্বদ্ধ হয়ে উঠবার আগেই অচল হয়ে আসে । যা কিছু ভারিক্কী তা-ই যেন বাতাসে মিলিয়ে যায়, যা পবিত্র তা হয় কলুষিত, শেষপর্যন্ত মানুষ বাধ্য হয় তার জীবনের আসল অবস্থা এবং অপরের সঙ্গে তার সম্পর্কটাকে খোলা চোখে দেখতে ।"
"শিল্পের মালিক কর্তৃক মজুরের শোষণ খানিকটা সম্পূর্ণ হওয়া মাত্র অর্থাৎ তার মজুরির টাকাটা পাওয়া মাত্র, তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বুর্জোয়া শ্রেনীর অন্যান্য অংশ - বাড়িওয়ালা, দোকানদার, মহাজন প্রভৃতি । "
"... মজুরেরা তখনও দেশময় ছড়ানো এলোমেলো জনতামাত্র, পারস্পরিক প্রতিযোগিতায় ছত্রভঙ্গ । কোথাও যদি তারা অধিকতর সংহত সংস্থায় একজোটও হয়, তবু সেটা তখনও নিজস্ব সক্রিয় সম্মিলনের ফল নয়, বরং বুর্জোয়া শ্রেণীর সম্মিলনের ফলমাত্র । এ শ্রেণী নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য গোটা প্রলেতারিয়েতকে সচল করতে বাধ্য হয়, তখনও কিছু দিনের জন্য সে চেষ্টায় সফলও হয় । সুতরাং এই পর্যায়ে মজুরেরা লড়ে নিজেদের শত্রুর বিপক্ষে নয়, শত্রুর শত্রু, অর্থাৎ নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের অবশিষ্টাংশ, জমিদার, শিল্প বহির্ভূত বুর্জোয়া, পেটি বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে । এ অবস্থায় ইতিহাসের সমস্ত গতিটি বুর্জোয়া শ্রেনীর হাতের মুঠোর মধ্যে থাকে; এভাবে অর্জিত প্রতিটি জয় হল বুর্জোয়ার জয় ।"
"মজুরি-শ্রমের গড়পড়তা দাম হল নিম্নতম মজুরি, অর্থাৎ মেহনতী হিসাবে মেহনতীর মাত্র অস্তিত্বটুকু বজায় রাখার জন্য যা একান্ত আবশ্যক, গ্রাসাচ্ছাদনের সেইটুকু উপকরণ । সুতরাং মজুরি-শ্রমিক শ্রম করে যেটুকু ভাগ পায় তাতে কেবল কোনো ক্রমে এই অস্তিত্বটুকু চালিয়ে যাওয়া ও পুনরুৎপাদন করা চলে । শ্রমোৎপন্নের উপর এই ব্যক্তিগত দখলি, যা কেবল মানুষের প্রাণরক্ষা ও নতুন মানুষের জন্মদানের কাজে অপরের পরিশ্রমের উপর কর্তৃত্ব চালাবার মতো কোনো উদ্বৃত্ত যার থাকে না, তেমন ব্যক্তিগত দখলির উচ্ছেদ একেবারেই আমাদের উদ্দেশ্য নয় । আমরা কেবল উচ্ছেদ চাই দখলির উচ্ছেদ চাই দখলির এই শোচনীয় প্রকৃতিটার, যার ফলে শ্রমিক বাঁচে শুধু পুঁজি বাড়ানোর জন্য, তাকে বাঁচতে হয় শাসক শ্রেণীর স্বার্থসিদ্ধির জন্য যতটা প্রয়োজন ঠিক ততখানি পর্যন্ত ।"
"মেহনতীদের দেশ নেই । তাদের যা নেই তা আমরা কেড়ে নিতে পারি না । প্রলেতারিয়েতকে যেহেতু সর্বাগ্রে রাজনৈতিক আধিপত্য অর্জন করতে হবে, দেশের পরিচালক শ্রেণীর পদে উঠতে হবে, নিজেকেই জাতি হয়ে উঠতে হবে, তাই সেদিক থেকে প্রলেতারিয়েত নিজেই জাতি, যদিও কথাটার বুর্জোয়া অর্থে নয় ।"
"আপন মতামত ও লক্ষ্য গোপন রাখতে কমিউনিস্টরা ঘৃণা বোধ করে । খোলাখুলি তারা ঘোষণা করে যে তাদের লক্ষ্য সিদ্ধ হতে পারে কেবল সমস্ত প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সবল উচ্ছেদ মারফত । কমিউনিস্ট বিপ্লবের আতঙ্কে শাসক শ্রেণীরা কাঁপুক । শৃঙ্খল ছাড়া প্রলেতারিয়েতের হারাবার কিছু নেই । জয় করবার জন্য আছে সারা জগৎ ।"
No comments:
Post a Comment