গত শতকের ষাটের দশক থেকেই পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র চলছে। বামপন্থীরা যাতে নির্বাচনের মাধ্যমেও ক্ষমতার কাছাকাছি না আসতে পারে তার জন্য মার্কিনিরা দেদার টাকা খরচ করা সহ সমস্ত রকম চেষ্টা চালিয়েছে। ভারতে নিযুক্ত আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ডেনিয়াল প্যাট্রিক ময়নিহান ১৯৭৮ সালে 'এ ডেঞ্জারাস প্লেস' নাম একটি বই প্রকাশ করেন। বইটিতে তিনি বলেন, 'আমরা দুবার - মাত্র দুবার, ভারতের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছি। এজন্য আমরা একটা রাজনৈতিক দলকে টাকা দিয়েছিলাম। দুবারই রাজ্য (বিধানসভা) নির্বাচনের আগে কমিউনিস্টদের সম্ভাব্য বিজয় ঠেকানোর জন্যই আমরা এটা করেছিলাম। একবার কেরালা আর একবার পশ্চিমবঙ্গে - যেখানে কলকাতা অবস্থিত - আমরা টাকা দিয়েছিলাম" (পৃ: ৪১)। ১৯৫৭ সালে কেরালা বিধানসভা নির্বাচনে যাতে বামপন্থীরা সরকার গঠন করতে না পারে, তার জন্যই ময়নিহান টাকা দিয়েছিলেন। আর ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের সম্ভাব্য বিজয় ঠেকানোর জন্যই আমেরিকা টাকা ঢেলেছিল। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি ১৯৫৭ সালে ছিলেন কংগ্রেসের সভানেত্রী, আর ১৯৬৭ সালে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বহুল প্রচারিত ময়নিহানের এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে কংগ্রেস কিন্তু কোনো আপত্তি জানায়নি। স্বাধীনতার পর থেকেই কমিউনিস্টরা যাতে ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা না নিতে পারে, তার জন্য প্রত্যেক নির্বাচনের আগে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে। দিব্যি কেটে ময়নিহান দুবার ভারতের নির্বাচনে আমেরিকার হস্তক্ষেপের কথা বললেও ব্যাপারটা যে সেখানেই থেমে থাকেনি, পরবর্তী অনেক ঘটনাতেই তার প্রমাণ মেলে।
ইন্দিরা গান্ধি হত্যার পর ১৯৮৫ সালে ভারতে মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনেই তখন পর্যন্ত রাজ্য রাজনীতিতে সম্পূর্ণ অপরিচিত মমতা ব্যানার্জি বামপন্থীদের দুর্গ বলে পরিচিত যাদবপুর কেন্দ্র থেকে সবাইকে অবাক করে দিয়ে জয়লাভ করেন। এই নির্বাচনের আগে কী ঘটেছিলো রুস্তেম গ্যালুইলিন-এর ' দ্য সি আই এ ইন এশিয়া' (১৯৮৮) থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি উল্লেখ করেন : "অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপ-সেনাপ্রধান এস কে সিং পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই-র কাছে এক বিবৃতি দেন। সিং স্বীকার করেন যে, আমেরিকার রাষ্ট্রদূত জর্জ শেরম্যান একজন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির ছদ্মবেশে তাঁর কাছে এক প্রস্তাব নিয়ে কলকাতায় আসেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাঁকে ১৯৮৫ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সাধারণ নির্বাচনের আগে নিজস্ব কর্মসূচি অনুযায়ী একটা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার কথা বলেন। রাজনৈতিক দলটি মার্কিন দূতাবাসের ছত্রছায়ায় কাজ করবে। এই দলটিকে সমস্ত বামপন্থী রাজনৈতিক দলের এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিপক্ষ শক্তি হিসেবে কাজ করতে হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেনারেলকে জানান, দল গড়ার জন্য সমস্ত টাকা তিনিই খরচ করবেন। এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে 'দ্য হিন্দুস্তান টাইমস' পত্রিকা বিষয়টিকে রাজনৈতিক উপায়ে হোয়াইট হাউসের নির্দেশ জারির চেষ্টা বলে উল্লেখ করে"। এর আগে ১৯৮০ সালের ১৮ ডিসেম্বর 'পিপলস ডেমোক্রেসি' পত্রিকায় ভারতের রাজনীতিতে সিআইএ-র হস্তক্ষেপ সম্বন্ধে একটা বেশ বড় প্রবন্ধ ছাপা হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত কার মাধ্যমে এবং কীভাবে কার্যকর করা হয়, তা নিয়ে নানা কথা বাজারে চালু আছে। তবে মার্কিন দূতাবাসের তরফ থেকে যে বিভিন্ন সময়ে মেদিনীপুর, বীরভূম, দার্জিলিঙ, কলকাতা, নন্দীগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে মাওবাদী-তৃণমূলসহ বিভিন্ন মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে একাধিক সভা করা হয়েছে তা নিয়ে অনেক লেখালিখি হয়েছে। মার্কিনিরা পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে যে কতখানি উৎসাহী উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্য থেকেই তা স্পষ্ট হয়। রাজ্যের নির্বাচনের মাসখানেক আগেই 'দ্য হিন্দু' পত্রিকায় ২১ এপ্রিল, ২০১১ প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায় যে, ২০০৯ সালের মে মাসে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু আসন বেড়ে যাওয়ার পর ২০ অক্টোবর কেবল ২৩০৩৫৩ মারফত আমেরিকার কনসাল জেনারেল বেথ এ পেইন তাঁর সরকারকে পশ্চিমবঙ্গের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমেরিকার করণীয় কাজ সম্বন্ধে কিছু পরামর্শ দেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি কতখানি সফল হবেন, তা নিয়ে সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও পেইন জানান, "মমতা ব্যানার্জি বর্তমানে রেল দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে এখনও আমেরিকা সফরে না গেলেও মার্কিন সরকারের উচিত পশ্চিমবাংলার "ভাবী মুখ্যমন্ত্রী" হিসেবে তাঁকে মদত দেওয়া চালিয়ে যাওয়া। তাঁর দল তৃণমূল কনফারেস প্রকাশ্যে কখনও আমেরিকার বিরোধিতা করেনি। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে যে, ব্যানার্জি পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার বর্তমান সিপিআই(এম) পরিচালিত সরকারের চাইতে আমেরিকার প্রতি বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ হবে।" পশ্চিমবাংলা বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে ২০১১ সালের মে মাসে আর ২০০৯ সালেই কলকাতার মার্কিন কনসাল জেনারেল মমতা ব্যানার্জিকে রাজ্যের "ভাবী মুখ্যমন্ত্রী" হিসেবে চিহ্নিত করে আমেরিকায় বার্তা পাঠাচ্ছেন এবং মদত চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। ব্যাপারটা কী আমাদের একটুও ভাবায় না? তারপর মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টন ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের নজিরবিহীনভাবে ভারতের কোন একটা রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎকার কী নিছকই একটা সহজ-সরল ব্যাপার?
আচ্ছা, কোন বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী যদি জাল 'ডক্টরেট' ডিগ্রিধারী হতেন কিংবা সংবিধান হাতে 'বাপের জমিদারি' বলে চিৎকার করে কোনো বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাম এমএলএ-রা যদি অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করতে করতে বিধানসভা ভাঙচুর করতেন - তাহলে বাংলার কথা বাদ দিন, সারা দুনিয়াতেই বামপন্থীদের কী বলে ডাকা হতো? তাছাড়া গত আড়াই বছরে রাজ্যে যা ঘটেছে যেমন, পার্ক স্ট্রিট, রায়গঞ্জ, ভাঙড়, কামদুনি, ফেসবুক, সারদা, মগরাহাট, কালীঘাট থানা, প্রেসিডেন্সি কলেজ, স্কুল, সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, পঞ্চায়েত নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে ছাপ্পা ভোট, স্কুল-কলেজের নির্বাচনে দুষ্কৃতী হামলা, পুলিস হেপাজতে সুদীপ্ত গুপ্তের হত্যা, ১৪২ জনের মতো বামপন্থী কর্মী হত্যা, হাজার হাজার কর্মী-নেতার ঘরবাড়ি ছাড়া, মিথ্যে মামলা ইত্যাদি - এর দশ ভাগের এক ভাগ ঘটনাও যদি বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রীর আমলে ঘটতো - তাহলে অবস্থাটা কী দাঁড়াতো, একবার কেউ কল্পনা করতে পারেন? কী হতো তাহলে সংবাদ মাধ্যমগুলোর ভূমিকা? এখন প্রতিদিন গণতন্ত্র-জবাই চলছে। বামপন্থীদের প্রতিবাদ, আন্দোলন - কোন কিছুকেই দাগ কাটতে দেওয়া হচ্ছে না। একটা ঘটনাকে অন্য ঘটনা দিয়ে চাপা দেওয়া হচ্ছে। বিধানসভা তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। তথাকথিত গণতন্ত্রপ্রেমীরা নীরব। কিন্তু কেন? বুর্জোয়া গণতন্ত্রে সরকারের পৰিৱৰ্তন কোন বড় ঘটনা নয়। এর আগেও দুবার বামপন্থীদের সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর একবার সরকার গঠন করতেই দেওয়া হয়নি। কিন্তু যে প্রশ্নটা সামনে আসছে তা হলো, কীভাবে এই পরিবতন হলো? ২০০৬ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মোট ১৯৪৫৬৭৭৬ বৈধ ভোটের মধ্যে বামফ্রন্ট পায় ১৯৮০০৪২৫ ভোট। শতকরা ৫০.১৮ জন ভোটার বামফ্রন্টের কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তৃণমূল-বিজেপি জোট পায় শতকরা মাত্র ২৮.৭৭ ভোট। এই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমর্থনে বামফ্রন্ট জয়লাভ করার ঠিক পরেই রাজ্যে কী এমন ঘটলো? ২০০৬ - ২০১১ সালের মধ্যে বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের লক্ষ লক্ষ বেকারের কাজের ব্যবস্থার জন্য সিঙ্গুর, শালবনী, নয়াচর প্রভৃতি জায়গায় মৌলিক শিল্প গড়ে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করে সফলতার দোরগোড়ায় প্রায় পৌঁছে যায়। এটা যদি কোনো 'ভুল' বা 'অন্যায়' হয়, তা হলে অবশ্য আলাদা কথা। সমস্ত ক্ষেত্রেই বাধা দিয়ে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে লক্ষ লক্ষ মানুষের পেটের ভাত কেড়ে নেবার ব্যবস্থা করা হলো। বাংলার মানুষের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা এবং যুব সমাজের চরম সর্বনাশ করেও তৃণমূল ২০০৬-এর চাইতে ৮০ লক্ষের কিছু বেশি ভোট বাড়িয়ে ফেললো। কিন্তু কীভাবে? বিশেষ কোনো শক্তির মদত বা বিশেষ কোনো কৌশল গ্রহণ না করে যে একাজ করা সম্ভব নয়, পৃথিবীর সব চাইতে বোকা মানুষটিও তা বুঝতে পারে।
*****************************************************
এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্য ও ভূমিকা নিয়ে সারা পৃথিবীতে বরাবরই একটা সন্দেহ রয়ে গেছে। সমাজবদ্ধ প্রাণী হিসেবে মানুষ মানুষের জন্য ভাববে বা সমাজটাকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে সাহায্য করবে - এটাই তো স্বাভাবিক। কারণ এই শ্রেণিবিভক্ত সমাজব্যবস্থায় মুষ্টিমেয় কয়েকজন মানুষ সমাজের প্রায় সমস্ত সম্পত্তির মালিক। আর সম্পত্তি বলতে যা বোঝায়, বেশিরভাগ মানুষেরই তা নেই। তাই ব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। ১৮৪৫ সালে সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্কস তাঁর বিখ্যাত রচনা 'থিসিস অন ফয়েরবাখ'-এ প্রথম উল্লেখ করেন : 'দার্শনিকেরা কেবল নানাভাবে জগৎকে ব্যাখ্যা করেছেন, কিন্তু আসল কথা হলো সেটাকে পরিবর্তন করা'। কমিউনিস্টরাই প্রথম সমাজ পরিবর্তনের কথা বলে এবং তা করে দেখায়। জন্মলগ্ন থেকেই পুঁজিপতিরা মুনাফার জন্য মানুষের সঙ্গে মানুষের বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করে চলেছে। তারা সঙ্ঘবদ্ধ শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষের ওপর নানা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। এনজিও-দের টাকার মূল উৎস সাম্রাজ্যবাদী তহবিল। সাম্রাজ্যবাদীরা অন্য দেশের শ্রমিক কৃষক ও সাধারণ গরিব মানুষের মঙ্গলের কথা ভাববে, তা কুমীরের মার পুত্রশোকের মতোই অবিশ্বাস্য। আশির দশক থেকেই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এই 'ভাড়াটে সমাজসেবার ব্যবসার' রমরমা বাজার হলেও এর সূচনা কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই। ঐ বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই লেনিন 'সাম্রাজ্যবাদ - পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর' নামক তাঁর বিখ্যাত বইটি প্রকাশ করেন। মহাজনী পুঁজি বৃদ্ধি ও পুঁজি রপ্তানি - এই দুটো হলো সাম্রাজ্যবাদের মূল বিষয়। পুঁজি রপ্তানি বা বাজার দখলের জন্য অন্য দেশের সরকার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী দেশের একটা সুন্দর ভাবমূর্তি তৈরি করা প্রয়োজন। কমিউনিস্টরা সাম্রাজ্যবাদের শত্রু। তারা শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষের সুখে দুঃখে সবসময়ই পাশে থাকে। কমিউনিস্টরাই এই শোষণমূলক সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে সাধারণ মানুষকে নতুন সমাজ গোড়ার স্বপ্ন দেখায়। বিপ্লবের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র গঠিত হওয়ার পর থেকেই পুঁজিবাদ প্রমাদ গুণতে শুরু করে।
কমিউনিস্টদের পালের হাওয়া কেড়ে নেওয়ার জন্য সাম্রাজ্যবাদীরা নতুন কৌশল নেয়। মার্কিনি তেল সাম্রাজ্যের অন্যতম কর্ণধার জন রকফেলার এবং ইস্পাত শিল্পের একচেটিয়া কারবারি অ্যান্ডু কার্নেগি কমিউনিস্টদের বিকল্প হিসাবে জনসেবামূলক কাজের জন্য যথাক্রমে রকফেলার ফাউন্ডেশন এবং কার্নেগি ফাউন্ডেশন তৈরি করেন। উদ্দেশ্য : সমাজসেবার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মন থেকে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী ঘৃণা কমিয়ে দিয়ে কমিউনিস্ট-বিরোধী ঘৃণা জাগিয়ে তোলা। তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই কয়েকশো ফাউন্ডেশন গড়ে ওঠে। ১৯৩৬ সালে আমেরিকার বিখ্যাত ফোর্ড মোটর কোম্পানির উদ্যোগে গড়ে ওঠে ফোর্ড ফাউন্ডেশন। একইভাবে কেলগ ফাউন্ডেশন, গ্রান্ট ফাউন্ডেশন, ফ্রিডম রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ব্রাদার্স ব্রাদার ফাউন্ডেশন, আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, এশিয়া ফাউন্ডেশন ইত্যাদি তৈরি করা হয়। ভারতসহ তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে 'ফেলোশিপের' নামে সম্ভাবনাময় শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী প্রভৃতি বুদ্ধিজীবীদের মগজ ধোলাইয়ের জন্য আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া ছিল এইসব ফাউন্ডেশনের অন্যতম কাজ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীনে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তিলাভ করে। ফলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আশঙ্কিত হয়ে পড়ে। শুরু হয় কমিউনিস্ট বিরোধী নানা ষড়যন্ত্র। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোকে বাঁচাতে আমেরিকার স্বরাষ্ট্রসচিব জর্জ মার্শাল এক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এটাই মার্শাল প্ল্যান নামে পরিচিত। এরই অঙ্গ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় 'কেয়ার' বা কো-অপারেটিভ ফর আমেরিকান রিলিফ এভরিহোয়ার। এই সংস্থার মাধ্যমেই আমেরিকা তার উদ্বৃত্ত গম বা খাদ্যদ্রব্য সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পাঠাতে শুরু করে। পি এল ৪৮০-র কথা এখনও অনেকের মনে আছে। ভারতসহ ভূখা-মানুষের দেশগুলোতে এই সাহায্য টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। কমিউনিস্ট মতাদর্শের অগ্রগতি রোধ করে তার মূল লক্ষ্য।
*****************************************************
ভিয়েতনাম যুদ্ধের খলনায়ক মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব রবার্ট ম্যাকনামারা বিশ্বব্যাঙ্কের সভাপতির দায়িত্ব নেবার পর থেকেই ভারতসহ তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দান বা সেবার মাধ্যমে 'স্বেচ্ছামূলক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলির আন্দোলন' গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন।
*****************************************************
বিশিষ্ট মার্কিন-রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মাইনর উইনার বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবীগোষ্ঠীর মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মার্কিন অনুচর নিয়োগ করার দায়িত্ব পালন করেন। এইসব বুদ্ধিজীবীদের কাজের সুবিধার জন্য 'পার্টিবিহীন রাজনৈতিক সংগঠন' বা 'পার্টিবিহীন রাজনৈতিক আন্দোলন' গড়ে রোলার কথা বলা হলো।
No comments:
Post a Comment