"আর এস এসকে সে রকম বীর বা ত্রাতার বেশে হাজির করতে হলে, একটা মিথ্যা চেতনা সৃষ্টির প্রয়োজন ছিলো যে, হিন্দুরা বঞ্চিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে । সেই সঙ্গে জরুরি ছিলো , এর জন্য দায়ী বলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা জন্মানো (হিটলারের প্রচন্ড ইহুদি বিরোধিতার খেই ধরে) ।
গৈরিক বাহিনীর আজকের ক্রিয়াকলাপ ও প্রচার-কার্য গোলওয়ালকরের কাছে পাওয়া এই দুই নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক ইন্ধনের ভিত্তিতেই চলে । অভিষ্ট পূরণে তারা গোয়েবলসীয় কৌশলকে আরও উন্নত ও শানিততর (গোয়েবলস হিটলারের প্রচারমন্ত্রী ছিলেন) করেছে, অর্থাৎ মিথ্যা বলো - পর্বতপ্রমাণ মিথ্যা, যার ফলে মিথ্যাই সত্যরূপে প্রতীয়মান হবে ।"
" "বিদেশি অংশের সামনে দুটি পথ খোলা আছে । হয় দেশ ও জাতির সঙ্গে একাত্ম হও অথবা যতক্ষণ তারা থাকতে দেয় অথবা এ দেশ ছাড়তে হুকুম না দেয়, ততদিন তাদের দয়ায় থাকো ... ।" ... যে ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মকে রাজনীতি ও রাষ্ট্র থেকে পৃথক করে ব্যক্তিগত বিষয়রূপে গণ্য করে, গোলওয়ালকর তাকে খারিজ করলেন । ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রায় ঈশ্বরদ্রোহিতার পর্যায়ে ফেলে তিনি বিতর্ক জুড়ে দেন এই বলে যে,
"ধর্মকে ব্যক্তিগত প্রশ্নরূপে গণ্য করার এবং রাষ্ট্রীয় ও জনজীবনে পরিহারের পক্ষে একটা সাধারণ প্রবণতা দেখা যায় । ধর্মকে ভুল বোঝা এই ঝোঁকের কারণ এবং যাদের গোষ্ঠীতে ধর্ম বলার মতো কিছু নেই তারাই এই ঝোঁকের মূলে" (গোলওয়ালকর, ১৯৩৯, পৃ. ২৩) রয়েছেন ।"
========================================================================
"।। ফ্যাসিবাদের অনুপ্রেরণা ।।
সেই 'প্রাচীন জাতিদের' আচরণ কেমন হবে ? ফ্যাসিস্ত জার্মানির এর চেয়ে রাখঢাকহীন তোষামোদ আর হয় না ।
"প্রাচীন বর্ণাভিমান, যার বলে জার্মান উপজাতিরা সারা ইউরোপ ছেয়ে ফেলেছিলো, এ যুগের জার্মানিতে সে আবার মাথা তুলেছে, ফলে জাতিকে তার লুন্ঠনকারী পূর্বপুরুষ দ্বারা নির্ধারিত লক্ষ্যপূরণের পথ অনুসরণ করতেই হচ্ছে । আমাদের ক্ষেত্রেও একই হবে; বর্ণাভিমান আবার জেগে উঠেছে । এই দেশ যে আধ্যাত্মিক মহাপুরুষকুলের জন্ম দিয়েছে, তাঁরা আজ সৌম্য মহিমায় দৃপ্ত পদভারে মেদিনী কাঁপাচ্ছেন, তাঁরাই এর সাক্ষ্য বহন করছেন ।"
আরও বলেছেন
"জাতির বিশুদ্ধতা ও তার সংস্কৃতিকে অক্ষুণ্ন রাখতে, জার্মানি সেমিটিক জাতির ইহুদিদের বহিষ্কার করে সারা পৃথিবীকে চমকে দিয়েছিলো । এখানে জাত্যাভিমান তার তীব্রতমরূপে প্রকট । জার্মানি দেখিয়ে দিয়েছে যে মূলেই যারা পৃথক, সেই জাতি, সংস্কৃতিকে অভিন্ন সত্তায় সমন্বিত করা প্রায় অসম্ভব । হিন্দুস্তানে আমরা, আমাদের হিতার্থে এ থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিতে পারি" (গোলওয়ালকর, ১৯৩৯, পৃ. ৩৫) ।
এইভাবে হিটলার হয়ে দাঁড়ালেন 'গুরুজির গুরু'। আর এস এসের রাজনৈতিক কর্মসূচির দানবীয় প্রকৃতির এটাই বাস্তব রূপ । হিন্দু ধর্ম ও প্রাচীন সবকিছুর ধ্বজাধারীর বেশে, আদ্যোপান্ত আধুনিক ও পাশ্চাত্য ফ্যাসিবাদী ধারণা আমদানি করতে, তার কোনো বিবেক দংশন নেই । ফ্যাসিবাদ ছাড়া, বাকি সব পাশ্চাত্য ধারণা ও সভ্যতার প্রগতি এদের কাছে 'বিজাতীয়' বলে নিন্দিত ।
ফ্যাসিবাদী ছদ্ম-হিন্দুত্বের কোনো কোনো প্রবক্তা ফ্যাসিবাদের এই নগ্ন স্তাবকতার সপক্ষে উদ্ভূত কুযুক্তি নিয়ে এগিয়ে আসেন ।
"১৯৩৯ সালে ইহুদিদের প্রতি হিটলারের আচরণের বিশেষ কিছু খবর না থাকায়, তার একটি মাত্র উল্লেখ উপেক্ষা করাই উচিত অথবা মানুষটিকে সন্দেহের হাত থেকে ছাড় দেওয়াই সঙ্গত" (মোদক, ১৯৯৩, পৃ. ১১)।
যদি তাই হয়, তবে ১৯৪৭ সালের সংস্করণেও এই অনুচ্ছেদটি অপরিবর্তিত রয়ে গেল কেন ? ১৯৪৭ সালে হিটলারের অপরাধগুলি সাধারণ মানুষের গোচরে এসেছিলো, যেমন এর আগে ১৯৩৯-এও এসেছিলো । পরবর্তী সংস্করণে গোলওয়ালকর ওই অংশটি বাদ দিলেন না কেন ? তথ্য পাওয়া যায়নি বলে নয়, কারণ হলো গোলওয়ালকর ও আজকের গৈরিক বাহিনী হিটলারের পদ্ধতিকে পাল্লা দিতে চায় ।
জ্বলন্ত অসঙ্গতিও গোলওয়ালকরকে বিচলিত করে না । যদি, তাঁর মতে, হিন্দুরাই আর্য ছিলো, তাহলে হিটলার আবার কোন আর্যদের ত্রাতার ভূমিকা নিয়েছিলেন ? সেগুলোও যদি আর্য হয়, তবে তারা কি ভারত থেকে জার্মানিতে দেশান্তরী হয়েছিলো নাকি উল্টোটা ? তাঁর তত্ত্ব মানলে, ভারত ও জার্মানি উভয়েই একটি অভিন্ন জাতির অংশ !
অনুশীলনটি পুরোপুরিই ফ্যাসিবাদী ঝোঁকের হিন্দুরাষ্ট্রের মতাদর্শগত ভিত্তি জুগিয়েছে, যা গৈরিক বাহিনীর আজকের ব্রতের সারমর্ম ।"
=======================================================================
"হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা আর মুসলিম মৌলবাদ একে অপরকে পুষ্টি যোগায় ।"
"গোলওয়ালকারের বইটি (we or our nationhood defined by guruji) প্রকাশ হওয়ার দু'বছর বাদে, জামাত-এ-ইসলামি গঠিত হয় । ১৯৪১ সালের আগস্ট মাসে, মওলানা আবুল আলা মওদুদির নেতৃত্বে পাঠানকোটে তার প্রতিষ্ঠা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । আর এস এসের কাছে যেমন গোলওয়ালকার, জামাতের ক্ষেত্রে তেমনি মওদুদি । তাঁদের রাজনৈতিক প্রকল্প ও ভূমিকার সাদৃশ্য বাস্তবিকই চমকপ্রদ । হিটলার যেমন গোলওয়ালকারের নায়ক, ঠিক তেমনি মওদুদির কাছেও । গোলওয়ালকার যেমন মানব সভ্যতার আধুনিক সব কিছুকেই - স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সংসদীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ - বিজাতীয় ধারণা বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, মওদুদির এবং মুসলিম মৌলবাদী দর্শনের ভূমিকাও ছিলো অনুরূপ ।
১৯৪৭ সালের মে মাসে, দেশবিভাগ যখন আসন্ন, মওদুদি হিন্দু শাস্ত্র ও বিধান মেনে রাষ্ট্র ও সমাজ গড়তে ভারতীয়দের আহ্বান জানান, যেমন পাকিস্তানকে তাঁরা গড়বেন 'আল্লা'র বিধান মেনে ।পাকিস্তানে কুআদিআনি-বিরোধী দাঙ্গার অনুসন্ধানে নিযুক্ত এক সদস্য কমিশনের বিচারক মহম্মদ মুনিবের কিছু প্রশ্নের উত্তরে মওদুদি বলেন :
"যদি হিন্দু বিধানের ওপর ভর করে কোনো হিন্দু সরকার ভারতে আসে এবং মনুর বিধান আইনরূপে গৃহীত হয়, এবং যার ফলে মুসলিমরা অস্পৃশ্য বলে বিবেচিত হয়, সরকারে তাদের অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া হয় - শুধু তাই নয়, তারা নাগরিক অধিকার থেকে পর্যন্ত বঞ্চিত হয়, তবে আমার আপত্তি নেই" (জেড এ নিজামি, ১৯৭৫)
হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা আর মুসলিম মৌলবাদ একে অপরকে পুষ্টি জোগায় । এও প্রক্রিয়ায়, উভয়েই সাম্প্রদায়িক বিষ গভীর থেকে গভীরে ছড়িয়ে দেয়, আমাদের দেশের ঐক্য ও সংহতির বিন্যাস বিপন্ন করে । উভয়েই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের --- যাদের প্রতিনিধিরূপে তারা নিজেদের দাবি করে --- স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে । আজ ভারত ধর্মনিরপেক্ষ, কারণ হিন্দু ও মুসলিমদের বৃহত্তর অংশ তাদের এই রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে ।"
গৈরিক বাহিনীর আজকের ক্রিয়াকলাপ ও প্রচার-কার্য গোলওয়ালকরের কাছে পাওয়া এই দুই নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক ইন্ধনের ভিত্তিতেই চলে । অভিষ্ট পূরণে তারা গোয়েবলসীয় কৌশলকে আরও উন্নত ও শানিততর (গোয়েবলস হিটলারের প্রচারমন্ত্রী ছিলেন) করেছে, অর্থাৎ মিথ্যা বলো - পর্বতপ্রমাণ মিথ্যা, যার ফলে মিথ্যাই সত্যরূপে প্রতীয়মান হবে ।"
" "বিদেশি অংশের সামনে দুটি পথ খোলা আছে । হয় দেশ ও জাতির সঙ্গে একাত্ম হও অথবা যতক্ষণ তারা থাকতে দেয় অথবা এ দেশ ছাড়তে হুকুম না দেয়, ততদিন তাদের দয়ায় থাকো ... ।" ... যে ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মকে রাজনীতি ও রাষ্ট্র থেকে পৃথক করে ব্যক্তিগত বিষয়রূপে গণ্য করে, গোলওয়ালকর তাকে খারিজ করলেন । ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রায় ঈশ্বরদ্রোহিতার পর্যায়ে ফেলে তিনি বিতর্ক জুড়ে দেন এই বলে যে,
"ধর্মকে ব্যক্তিগত প্রশ্নরূপে গণ্য করার এবং রাষ্ট্রীয় ও জনজীবনে পরিহারের পক্ষে একটা সাধারণ প্রবণতা দেখা যায় । ধর্মকে ভুল বোঝা এই ঝোঁকের কারণ এবং যাদের গোষ্ঠীতে ধর্ম বলার মতো কিছু নেই তারাই এই ঝোঁকের মূলে" (গোলওয়ালকর, ১৯৩৯, পৃ. ২৩) রয়েছেন ।"
========================================================================
"।। ফ্যাসিবাদের অনুপ্রেরণা ।।
সেই 'প্রাচীন জাতিদের' আচরণ কেমন হবে ? ফ্যাসিস্ত জার্মানির এর চেয়ে রাখঢাকহীন তোষামোদ আর হয় না ।
"প্রাচীন বর্ণাভিমান, যার বলে জার্মান উপজাতিরা সারা ইউরোপ ছেয়ে ফেলেছিলো, এ যুগের জার্মানিতে সে আবার মাথা তুলেছে, ফলে জাতিকে তার লুন্ঠনকারী পূর্বপুরুষ দ্বারা নির্ধারিত লক্ষ্যপূরণের পথ অনুসরণ করতেই হচ্ছে । আমাদের ক্ষেত্রেও একই হবে; বর্ণাভিমান আবার জেগে উঠেছে । এই দেশ যে আধ্যাত্মিক মহাপুরুষকুলের জন্ম দিয়েছে, তাঁরা আজ সৌম্য মহিমায় দৃপ্ত পদভারে মেদিনী কাঁপাচ্ছেন, তাঁরাই এর সাক্ষ্য বহন করছেন ।"
আরও বলেছেন
"জাতির বিশুদ্ধতা ও তার সংস্কৃতিকে অক্ষুণ্ন রাখতে, জার্মানি সেমিটিক জাতির ইহুদিদের বহিষ্কার করে সারা পৃথিবীকে চমকে দিয়েছিলো । এখানে জাত্যাভিমান তার তীব্রতমরূপে প্রকট । জার্মানি দেখিয়ে দিয়েছে যে মূলেই যারা পৃথক, সেই জাতি, সংস্কৃতিকে অভিন্ন সত্তায় সমন্বিত করা প্রায় অসম্ভব । হিন্দুস্তানে আমরা, আমাদের হিতার্থে এ থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিতে পারি" (গোলওয়ালকর, ১৯৩৯, পৃ. ৩৫) ।
এইভাবে হিটলার হয়ে দাঁড়ালেন 'গুরুজির গুরু'। আর এস এসের রাজনৈতিক কর্মসূচির দানবীয় প্রকৃতির এটাই বাস্তব রূপ । হিন্দু ধর্ম ও প্রাচীন সবকিছুর ধ্বজাধারীর বেশে, আদ্যোপান্ত আধুনিক ও পাশ্চাত্য ফ্যাসিবাদী ধারণা আমদানি করতে, তার কোনো বিবেক দংশন নেই । ফ্যাসিবাদ ছাড়া, বাকি সব পাশ্চাত্য ধারণা ও সভ্যতার প্রগতি এদের কাছে 'বিজাতীয়' বলে নিন্দিত ।
ফ্যাসিবাদী ছদ্ম-হিন্দুত্বের কোনো কোনো প্রবক্তা ফ্যাসিবাদের এই নগ্ন স্তাবকতার সপক্ষে উদ্ভূত কুযুক্তি নিয়ে এগিয়ে আসেন ।
"১৯৩৯ সালে ইহুদিদের প্রতি হিটলারের আচরণের বিশেষ কিছু খবর না থাকায়, তার একটি মাত্র উল্লেখ উপেক্ষা করাই উচিত অথবা মানুষটিকে সন্দেহের হাত থেকে ছাড় দেওয়াই সঙ্গত" (মোদক, ১৯৯৩, পৃ. ১১)।
যদি তাই হয়, তবে ১৯৪৭ সালের সংস্করণেও এই অনুচ্ছেদটি অপরিবর্তিত রয়ে গেল কেন ? ১৯৪৭ সালে হিটলারের অপরাধগুলি সাধারণ মানুষের গোচরে এসেছিলো, যেমন এর আগে ১৯৩৯-এও এসেছিলো । পরবর্তী সংস্করণে গোলওয়ালকর ওই অংশটি বাদ দিলেন না কেন ? তথ্য পাওয়া যায়নি বলে নয়, কারণ হলো গোলওয়ালকর ও আজকের গৈরিক বাহিনী হিটলারের পদ্ধতিকে পাল্লা দিতে চায় ।
জ্বলন্ত অসঙ্গতিও গোলওয়ালকরকে বিচলিত করে না । যদি, তাঁর মতে, হিন্দুরাই আর্য ছিলো, তাহলে হিটলার আবার কোন আর্যদের ত্রাতার ভূমিকা নিয়েছিলেন ? সেগুলোও যদি আর্য হয়, তবে তারা কি ভারত থেকে জার্মানিতে দেশান্তরী হয়েছিলো নাকি উল্টোটা ? তাঁর তত্ত্ব মানলে, ভারত ও জার্মানি উভয়েই একটি অভিন্ন জাতির অংশ !
অনুশীলনটি পুরোপুরিই ফ্যাসিবাদী ঝোঁকের হিন্দুরাষ্ট্রের মতাদর্শগত ভিত্তি জুগিয়েছে, যা গৈরিক বাহিনীর আজকের ব্রতের সারমর্ম ।"
=======================================================================
"হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা আর মুসলিম মৌলবাদ একে অপরকে পুষ্টি যোগায় ।"
"গোলওয়ালকারের বইটি (we or our nationhood defined by guruji) প্রকাশ হওয়ার দু'বছর বাদে, জামাত-এ-ইসলামি গঠিত হয় । ১৯৪১ সালের আগস্ট মাসে, মওলানা আবুল আলা মওদুদির নেতৃত্বে পাঠানকোটে তার প্রতিষ্ঠা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । আর এস এসের কাছে যেমন গোলওয়ালকার, জামাতের ক্ষেত্রে তেমনি মওদুদি । তাঁদের রাজনৈতিক প্রকল্প ও ভূমিকার সাদৃশ্য বাস্তবিকই চমকপ্রদ । হিটলার যেমন গোলওয়ালকারের নায়ক, ঠিক তেমনি মওদুদির কাছেও । গোলওয়ালকার যেমন মানব সভ্যতার আধুনিক সব কিছুকেই - স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সংসদীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ - বিজাতীয় ধারণা বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, মওদুদির এবং মুসলিম মৌলবাদী দর্শনের ভূমিকাও ছিলো অনুরূপ ।
১৯৪৭ সালের মে মাসে, দেশবিভাগ যখন আসন্ন, মওদুদি হিন্দু শাস্ত্র ও বিধান মেনে রাষ্ট্র ও সমাজ গড়তে ভারতীয়দের আহ্বান জানান, যেমন পাকিস্তানকে তাঁরা গড়বেন 'আল্লা'র বিধান মেনে ।পাকিস্তানে কুআদিআনি-বিরোধী দাঙ্গার অনুসন্ধানে নিযুক্ত এক সদস্য কমিশনের বিচারক মহম্মদ মুনিবের কিছু প্রশ্নের উত্তরে মওদুদি বলেন :
"যদি হিন্দু বিধানের ওপর ভর করে কোনো হিন্দু সরকার ভারতে আসে এবং মনুর বিধান আইনরূপে গৃহীত হয়, এবং যার ফলে মুসলিমরা অস্পৃশ্য বলে বিবেচিত হয়, সরকারে তাদের অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া হয় - শুধু তাই নয়, তারা নাগরিক অধিকার থেকে পর্যন্ত বঞ্চিত হয়, তবে আমার আপত্তি নেই" (জেড এ নিজামি, ১৯৭৫)
হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা আর মুসলিম মৌলবাদ একে অপরকে পুষ্টি জোগায় । এও প্রক্রিয়ায়, উভয়েই সাম্প্রদায়িক বিষ গভীর থেকে গভীরে ছড়িয়ে দেয়, আমাদের দেশের ঐক্য ও সংহতির বিন্যাস বিপন্ন করে । উভয়েই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের --- যাদের প্রতিনিধিরূপে তারা নিজেদের দাবি করে --- স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে । আজ ভারত ধর্মনিরপেক্ষ, কারণ হিন্দু ও মুসলিমদের বৃহত্তর অংশ তাদের এই রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে ।"
No comments:
Post a Comment