Saturday, 17 February 2024

বিপ্লবের বলি - সম্পাদনা পবিত্রকুমার গুপ্ত

কবি রবীন্দ্রনাথ বড় দুঃখের সহিত লিখিয়াছিলেন "পিতামহের বিরুদ্ধে আমাদের এইটেই সব চেয়ে বড়ো অভিযোগ। সেই তো আজ তাঁহারা নাই, তবে ভালো মন্দ কোনো-একটা অবসরে তাঁহারা রীতিমত মরিলেন  না কেন। তাঁহারা যদি মরিতেন তবে উত্তরাধিকারসূত্রে আমরা নিজেদের মরিবার শক্তি সম্বন্ধে আস্থা রাখিতে পারিতাম। তাঁহারাও নিজে না খাইয়াও ছেলেদের অন্নের সংগতি রাখিয়া গেছেন, শুধু মৃত্যুর সংগতি রাখিয়া যান নাই। এত বড়ো দুর্ভাগ্য, এত বড়ো দীনতা আর কী হইতে পারে।"

কবি আবার লিখিয়াছেন "বাঙালী আজকাল লোকসমাজে বাহির হইয়াছে। মুশকিল এই যে, জগতের মৃত্যুশালা হইতে তাহার কোনো পাস নাই। সুতরাং তাহার কথাবার্তা যতই বড়ো হোক, কাহারও কাছে সে খাতির দাবি করিতে পারে না। এইজন্য তাহার আস্ফালনের কথায় অত্যন্ত বেসুর এবং নাকিসুর লাগে। না মরিলে সেটার সংশোধন হওয়া শক্ত।"
********************************************************
ক্ষাত্রবীর্য্যহীন ভীরু বলিয়া নূতন রাজা ইংরাজ তাহার সামরিক খাতায় বাঙ্গালীর নাম কাটিয়া দিয়াছিল। ইংরাজী শিক্ষিত বাবুর দল, সাহেব মুখনিঃসৃত অপবাদ নীরবে সহ্য করিয়াছে, এমন কি নির্লজ্জের মত তাহা সমর্থনও করিয়াছে। বিজয়ী ইংরাজ কখনো বাঙ্গালীর মুখে অভিনেতাসুলভ অপরিমিত স্পর্দ্ধাবাক্য শুনিয়া চিন্তিত বা চঞ্চল হয় নাই, - কার্য্যে যে বাঙ্গালী কিছুই করিতে পারে না, এই সিদ্ধান্ত সকলেরই মনে বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু বাঙ্গালী চরিত্রের মধ্যেও যে প্রচণ্ড দুঃসাহসিকতার বীজ লুক্কায়িত আছে, - যাহা সমস্ত পারিপার্শ্বিক অসহায় অবস্থাকে উপেক্ষা করিয়া অসাধ্য সাধনের জন্য তেজোদৃপ্ত মস্তক দাঁড়াইতে পারে, যাহা অত্যাচার, শাসন, পীড়নের ভয়কে তুচ্ছ করিয়া মরণরঙ্গে মাতিতে পারে, নিশ্চিত মৃত্যু বা ততোধিক ভয়ঙ্কর কঠোর শাস্তির সম্মুখে দাঁড়াইয়া যাহা ব্যাঙ্গহাস্যে আত্মগৌরব রাখিতে পারে - সেই অপ্রেমেয় সাহস ও শৌর্য্য প্রকাশ করিয়া বিংশ শতাব্দীর প্রথম প্রভাতেই যাহারা বাঙ্গালীর দীর্ঘ দুই শতাব্দীর কলঙ্ক স্খলন করিয়াছেন, এমনকি রাজপুরুষগণেরও বিস্মিত শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিয়াছিলেন, -- যতীন্দ্রনাথ তাঁহাদেরই মুকুটমণি।


No comments:

Post a Comment