আলোচ্য বৎসরগুলিতে শ্রমিকশ্রেণীকে মার্কস-লেনিনের বিপ্লবী শিক্ষায় শিক্ষিত করবার জন্য কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে শ্রমিক-সংগঠনগুলির প্রচেষ্টা চলেছিল নিরন্তনভাবে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যে মীরাট মামলা সাজিয়ে কমিউনিস্টদের কঠোর সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করে সাম্রাজ্যবাদী সরকার ভারতের শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে কমিউনিস্ট মতাদর্শের প্রভাব সমূলে উৎপাটন করবার যে চেষ্টা করেছিল কারাগারের বাইরে অবস্থিত তরুণ কমিউনিস্টরা তাঁদের একনিষ্ঠ ও সাহসী কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সেই উদ্দেশ্যকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দেয়। জেলের মধ্য থেকে কমিউনিস্ট মতবাদকে শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবী দর্শনকে ভারতের নিপীড়িত জনগণের সামনে বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরেন। তেমনি কারাগারের বাইরেও বয়সের দিক থেকে অত্যন্ত তরুণ, অনভিজ্ঞ অথচ বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ কমিউনিস্টরা শ্রমিকশ্রেণীকে সরাসরি জঙ্গী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পরিচালিত করে এবং মার্কস-লেনিনের মতাদর্শের বিপ্লবী তাৎপর্যগুলিকে বিশ্লেষণ করে শ্রমিকদের মধ্যে বিপ্লবী শ্রেণী-চেতনা বিকাশে অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেক কমিউনিস্ট কর্মীও এই সময়ে মার্কসীয় দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। সন্ত্রাসবাদী কর্মীদের একটা বিরাট অংশ কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৩৫ সালের মে দিবসে আন্দামান জেলে ভগত সিং-এর সহকর্মীগণ ৩১ জন সন্ত্রাসবাদী কর্মী কমিউনিস্ট কো-অর্ডিনেশন গঠন করেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নেতৃবৃন্দ মার্কসীয় দর্শন গ্রহণ করেন। ফলে এই সময়ে মার্কসীয় দর্শনের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ব্যাপ্তির দিক থেকে আলোচ্য সময়ে বিভিন্ন কারণে শ্রমিক আন্দোলনের যথেষ্ট ঘাটতি থাকলেও শ্রমিকশ্রেণীর শ্রেণী-চেতনার বিকাশে এই সময়ের অবদান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
No comments:
Post a Comment