আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল ধারাবাহিকতার সাথে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার প্রতি তার অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা, যা তাকে বাস্তবিকভাবেই একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদান করে। 'সাম্রাজ্য'-এর চাইতে সাম্রাজ্যবাদ আরও বড়ো ব্যাপার, এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা কেবল বুশ বিরোধিতা, অথবা প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলের সৈন্য সমাবেশ বা ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনানিবেশ-এর বিরোধিতা করার চেয়ে অনেক বড়ো ব্যাপার, সংক্ষেপে, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা কেবল সাম্প্রতিককালে আধিপত্যকামী শক্তির নেওয়া বিভিন্ন অবস্থানের বিরোধিতা করা নয়, এটা হল রাজনীতির প্রতি একটা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিগত অবস্থান যা কিনা সমসময়ের প্রতিটি বিষয়কে বিশ্বজোড়া আধিপত্যকামী শ্রেণি সম্পর্কের জায়গা থেকে দেখে, এবং সিপিআই(এম) ও সাধারণভাবে বামপন্থীরাই ভারতবর্ষে একমাত্র শক্তি যারা কাজটি ধারাবাহিকভাবে করে চলেছে। এরা ভারত মার্কিন পরমাণু চুক্তিকে কেবলমাত্র একটি 'পরমাণু চুক্তি' হিসেবে দেখে না, বরং সর্বোপরি একে একটি 'ভারত-মার্কিন' চুক্তি হিসাবে দেখে। এরা এই চুক্তিকে কেবল খরচ ও লাভের নিরিখে নয় (যদিও চুক্তিটি এমনকি এই দিক থেকেও আপত্তিজনক) বরং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি কোন আগামীর ইঙ্গিত বহন করছে তার নিরিখেই মূল্যায়ন করে।
=================================================================
সন্ন্যাসীসুলভ নৈতিকতা এবং রাজনীতি থেকে সরে আসাটা, মূলগতভাবে দাঁড়িয়ে আছে এই বুদ্ধিজীবীদের রাজনীতি এবং রাজনীতির নোংরা দুনিয়া - যেখানে তাদের বিশ্বাসমতো দেবদূতেরা বাস করে না - তার প্রতি তাদের অবজ্ঞার ওপর। সুতরাং, এরা যার বিরোধিতা করতে চায়, তারই প্রতিবিম্বকে নির্মাণ করে, যেমন নয়া উদারনীতির দ্বারা সূচিত 'উন্নয়নের ধর্মাচার'। মনমোহন সিং বলেন : রাজনীতি হল নোংরা, রাজনীতির ঊর্দ্ধে ওঠো, 'উন্নয়ন'কে রাজনীতি থেকে আলাদা করো। বাম বিরোধী বুদ্ধিজীবীরাও বলেন : রাজনীতি হল নোংরা, রাজনীতির ঊর্দ্ধে ওঠো, 'উন্নয়ন'-এর বিরুদ্ধে লড়াইকে রাজনীতি থেকে আলাদা করো। রাজনীতির প্রতি এই অবজ্ঞা, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি ঘৃণা, আজ ভারতবর্ষে মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটা বড়ো অংশের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। ...
... সন্ন্যাসীসুলভ নৈতিকতার উত্থানও একই প্রবণতার অংশ, যেটা আসলে 'রাজনীতিকে ধ্বংস' করার একটা প্রক্রিয়া ব্যতীত আর কিছুই নয়। মধ্যবিত্ত নৈতিকতা কেবল বিভিন্ন সমস্যাকে তুলে ধরে, কোনো কর্মসূচিকে নয়। তারা একটা সমস্যা থেকে আরেকটা সমস্যায় বিচরণ করে এবং তারা কোনো সুব্যবস্থিত রাজনৈতিক ঐক্যের অনুপস্থিতিকেই কামনা করে। কেউ এটাকে "উত্তর আধুনিকতাবাদী রাজনীতি" বলতে পারেন, তবে আসলে এটা রাজনীতির অস্বীকৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
=================================================================
কমিউনিস্টদের সাথে বেশিরভাগ এনজিওর সবচেয়ে নিকট পার্থক্যটি, ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ফোরামের সাথে যুক্ত অত্যধিক প্রগতিশীলদের ধরলেও মূলত সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কিত। ইরাক যুদ্ধের বা মার্কিন হস্তক্ষেপ সমূহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, যা অনেক প্রগতিশীল এনজিও-ই করতে পারে, তা কিন্তু কোনোভাবেই এটা বোঝায় না যে সেটা সাম্রাজ্যবাদের ধারণাকে স্বীকার করে নিতে হচ্ছে (এমনকি যখন এই জাতীয় হস্তক্ষেপ সমূহের পেছনে থাকা বস্তুগত স্বার্থকেও বোঝা যাচ্ছে) যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ এগুলিকে কোনো কাহিনিপর্বের ঘটনা হিসেবে দেখবে। কমিউনিস্টরা সাম্রাজ্যবাদকে বিভিন্ন আকস্মিক কাহিনিপর্বের সংকলন হিসাবে নয়, বরং একটা গোটা ব্যবস্থা হিসাবে দেখে যা পুঁজিবাদের চরিত্র থেকেই উদ্ভূত।
=================================================================
সন্ন্যাসীসুলভ নৈতিকতা এবং রাজনীতি থেকে সরে আসাটা, মূলগতভাবে দাঁড়িয়ে আছে এই বুদ্ধিজীবীদের রাজনীতি এবং রাজনীতির নোংরা দুনিয়া - যেখানে তাদের বিশ্বাসমতো দেবদূতেরা বাস করে না - তার প্রতি তাদের অবজ্ঞার ওপর। সুতরাং, এরা যার বিরোধিতা করতে চায়, তারই প্রতিবিম্বকে নির্মাণ করে, যেমন নয়া উদারনীতির দ্বারা সূচিত 'উন্নয়নের ধর্মাচার'। মনমোহন সিং বলেন : রাজনীতি হল নোংরা, রাজনীতির ঊর্দ্ধে ওঠো, 'উন্নয়ন'কে রাজনীতি থেকে আলাদা করো। বাম বিরোধী বুদ্ধিজীবীরাও বলেন : রাজনীতি হল নোংরা, রাজনীতির ঊর্দ্ধে ওঠো, 'উন্নয়ন'-এর বিরুদ্ধে লড়াইকে রাজনীতি থেকে আলাদা করো। রাজনীতির প্রতি এই অবজ্ঞা, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি ঘৃণা, আজ ভারতবর্ষে মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটা বড়ো অংশের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। ...
... সন্ন্যাসীসুলভ নৈতিকতার উত্থানও একই প্রবণতার অংশ, যেটা আসলে 'রাজনীতিকে ধ্বংস' করার একটা প্রক্রিয়া ব্যতীত আর কিছুই নয়। মধ্যবিত্ত নৈতিকতা কেবল বিভিন্ন সমস্যাকে তুলে ধরে, কোনো কর্মসূচিকে নয়। তারা একটা সমস্যা থেকে আরেকটা সমস্যায় বিচরণ করে এবং তারা কোনো সুব্যবস্থিত রাজনৈতিক ঐক্যের অনুপস্থিতিকেই কামনা করে। কেউ এটাকে "উত্তর আধুনিকতাবাদী রাজনীতি" বলতে পারেন, তবে আসলে এটা রাজনীতির অস্বীকৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
=================================================================
কমিউনিস্টদের সাথে বেশিরভাগ এনজিওর সবচেয়ে নিকট পার্থক্যটি, ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ফোরামের সাথে যুক্ত অত্যধিক প্রগতিশীলদের ধরলেও মূলত সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কিত। ইরাক যুদ্ধের বা মার্কিন হস্তক্ষেপ সমূহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, যা অনেক প্রগতিশীল এনজিও-ই করতে পারে, তা কিন্তু কোনোভাবেই এটা বোঝায় না যে সেটা সাম্রাজ্যবাদের ধারণাকে স্বীকার করে নিতে হচ্ছে (এমনকি যখন এই জাতীয় হস্তক্ষেপ সমূহের পেছনে থাকা বস্তুগত স্বার্থকেও বোঝা যাচ্ছে) যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ এগুলিকে কোনো কাহিনিপর্বের ঘটনা হিসেবে দেখবে। কমিউনিস্টরা সাম্রাজ্যবাদকে বিভিন্ন আকস্মিক কাহিনিপর্বের সংকলন হিসাবে নয়, বরং একটা গোটা ব্যবস্থা হিসাবে দেখে যা পুঁজিবাদের চরিত্র থেকেই উদ্ভূত।
=================================================================
কমিউনিস্ট প্রয়োগকে অবশ্যই তত্ত্ব থেকে আহরিত হতে হয়, যার একমাত্র পরীক্ষা হল সঠিকতা এবং কখনোই ভোট কুড়ানোর ক্ষমতা নয়। প্যানেলের সদস্যদের উপদেশ অনুযায়ী বামপন্থীরা 'সাম্রাজ্যবাদ'কে ভুলে গেলে তাদের সাথে অন্যদের কোনো পার্থক্য থাকবে না। তাই ব্যাপারটা ঐতিহাসিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক। তবে শুধু তাই নয়, তারা সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিরোধ করা ছেড়ে দিলেও সেই প্রতিরোধ কিন্তু কোনো না কোনোভাবে চলবেই, এবং সেটা সন্ত্রাসবাদী, ধর্মীয় মৌলবাদ এবং ওসামা বিন লাদেনের দ্বারা সংঘটিত হবে।
যে সংস্কার তাদের করতে হবে তা 'সাম্রাজ্যবাদ'-এর ধারণা পরিত্যাগ করে নয়, বরং তার উল্টো অর্থাৎ সেই ধারণার প্রতি আরও দৃঢ়ভাবে অনুগত থেকে। শ্রমিক, কৃষক, কৃষি শ্রমিক ইত্যাদি বুনিয়াদি শ্রেণিগুলি যাদের স্বার্থ বামপন্থীরা রক্ষা করতে চায় তারা যাতে দুর্দশার সম্মুখীন না হয়ে (সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন এবং অভ্যন্তরীণ কর্পোরেট স্বার্থের কারণে) ত্রাণ পেতে পারে সেই বিষয়ে তাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এবং তার জন্য তাদের অবশ্যই পার্টির অভ্যন্তরে বিতর্ক, আলোচনা এবং ভিন্নমতের জন্য পরিসর সুনিশ্চিত করতে হবে, যাতে এটি বৌদ্ধিক কার্যকলাপের সফল কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে, একটি একশিলীভূত সত্তার পরিবর্তে যেখানে কোনো বামশাসিত রাজ্যে আঞ্চলিক বড়োকর্তা বা আমলার আদেশে কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সেই সিদ্ধান্তকে সারা দেশ জুড়ে এর সদস্যেরা সমর্থন করে এই কাজকে বিপ্লবী দায়িত্ব মনে করে।
প্রশ্ন আসতে পারে যে সমাজগণতন্ত্রী বলতে যা বোঝায় এটা কী তাই-ই নয়? উত্তর হল 'না'। কার্ল লিবনেখট-দের সঙ্গে রোজা লুক্সেমবার্গ সমাজগণতন্ত্রকে পরিত্যাগ করেছিলেন এবং একটা সমাজগণতন্ত্রী সরকারের সৈন্যদের হাতেই মারা যান; এবং তিনি একশিলীভূত সংগঠনে বিশ্বাসও করতেন না। লেনিন এতেও বিশ্বাস করতেন না। যখন তাঁর নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী সরকার অবরুদ্ধ পরিস্থিতিই ব্রেস্ত লিতভস্ক-এর চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, বুখারিন এবং অন্যান্যদের আপত্তি সত্ত্বেও, তখন তারা কমিউনিস্ট নামে একটা তাত্ত্বিক পত্রিকা প্রকাশ করে এই চুক্তিকে আক্রমণ করার জন্য, যেটা এমনকি ঐ সময়েও বলশেভিক সরকার বা পার্টি নিষিদ্ধ করেনি। পার্টির মধ্যে ভিন্ন মতের জন্য বৃহত্তর পরিসর থাকার সঙ্গে 'সমাজগণতন্ত্র' সমার্থক নয়। কমিউনিস্টদের প্রতি সমাজগণতন্ত্রীতে রূপান্তরিত হওয়ার উপদেশটি তাই, খুব সৎ অর্থে ধরলেও, ভারতীয় এলিটদের সাম্রাজ্যবাদের সাথে 'আপস' করা এবং শ্রমজীবী জনতার থেকে দূরত্ব বজায় রাখার মানসিকতারই প্রতিফলন মাত্র।
=================================================================
একটা আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলনরূপে কমিউনিজম এমন এক সময়ে বিকাশলাভ করেছিল যখন পুঁজিবাদী দেশগুলি উগ্র জাতীয়তাবাদকে মাহাত্ম্যদানকারী এক বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত। যুদ্ধরত দেশগুলোর শ্রমিকদের যাতে লগ্নিপুঁজির স্বার্থে যুদ্ধক্ষেত্রের ট্রেঞ্চে অপরকে খতম না করতে হয়, তাই লেনিনের তোলা 'সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত করা'র স্লোগান বা শান্তির পক্ষে ইউরোপীয় শ্রমিকদের আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য রোজা লুক্সেমবার্গ-এর স্লোগান পুঁজিবাদীদের দ্বারা পুষ্ট উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকতাবাদের পতাকা উড়িয়েছিল।
যে লগ্নিপুঁজির বিরুদ্ধে তারা শ্রমিকদের সংগঠিত করছিল তা ছিল জাতীয় লগ্নিপুঁজি, ব্রিটিশ, জার্মান অথবা ফরাসি। রুডলফ হিলফারডিং তাঁর বিখ্যাত কাজ 'ডাস ফিনাঞ্জ ক্যাপিটাল'-এ যেভাবে বিশ্লেষণ করেছেন বা এরিখ মারিয়া রিমার্ক তাঁর ধ্রুপদী রচনা 'অল কোয়াইট অন দ্য ওয়স্টার্ন ফ্রন্ট'-এ যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তা অনুযায়ী এই লগ্নিপুঁজির মতাদর্শ হল 'জাতীয়তার ধারণা'-কে গৌরবান্বিত করা। সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিকতাবাদ পুঁজিবাদী উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল; এবং দেশগুলিতে জাতীয় পুঁজির আধিপত্যের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সংগঠিত করার কাজটি কমিউনিস্টদের জন্য কোনো তাত্ত্বিক সমস্যার সৃষ্টি করেনি।
সমসাময়িক বিশ্বায়নের অনিবার্য ফলস্বরূপ যা ঘটল তা হল লগ্নিপুঁজির বিশ্বায়ন যেটি আবার অন্ধ দেশপ্রেমকে নয়, বরং একটি নিজস্ব ব্রান্ডের আন্তর্জাতিকতাবাদকে মদত জোগাল। এবং সংকটের প্রেক্ষিতে বিকল্প কর্মসূচির জন্য কোনো একটি দেশের জনসাধারণকে সংগঠিত করা মানে আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজির আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা, যার অর্থ জাতীয়তাবাদেই পিছিয়ে আসা এবং সমসাময়িক লগ্নি পুঁজি কথিত আন্তর্জাতিকতাবাদের কবল থেকে একটি বিশেষ জাতি রাষ্ট্র, যেটিকে বামপন্থীরা দখল করার আশা করছে, সেটির তত্ত্বাবধানে জাতিটির বিচ্ছিন্নকরণ। এটাই বামপন্থীদের উভয় সংকটের মধ্যে ফেলছে।
=================================================================
প্রথম বাধা শহুরে মধ্যবিত্তের ভূমিকা। ভারতে কৃষকশ্রেণির সমর্থন হারাবার আশঙ্কায় শঙ্কিত পুঁজিবাদ শহুরে মধ্যবিত্তের সমর্থন নিজের দিকে টানতে সমর্থ হয়েছে। এই শহুরে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় বিশ্বায়ন ও তার নয়া উদারপন্থী নীতিতে উপকৃত। এখানকার অবস্থা লাতিন আমেরিকার মত নয় যেখানে মুক্ত অর্থনীতি বস্তুত গভীর আর্থিক সংকট তৈরি করে যারা ভুক্তভোগী কেবল শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেত মজুর নয় শহুরে মধ্যবিত্তশ্রেণিও। ভারতে নয়া-উদারপন্থার আমলে তেমন কোনো গভীর সংকট সৃষ্টি হয়নি যা শহুরে মধ্যবিত্তকে এই ব্যবস্থা সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ করতে পারে।
নয়া উদারপন্থার এই সদ্যপ্রাপ্ত সমর্থন ভিতটি ব্যাঙ্গার্থে বামপন্থী হস্তক্ষেপেরই ফল (যদিও এর অর্থ এই নয় যে বামপন্থীদের হস্তক্ষেপ ঠিক ছিল না)। মুক্ত অর্থনীতি এবং দেশি বিনিময়মূল্যে স্বাধীনভাবে বিদেশি অর্থ সম্পদে পরিণত করার প্রয়াসের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের সফল প্রতিরোধে অর্থনীতি উপকৃত হয়েছে। একমাত্র চিন ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য প্রতিটি বৃহৎ অঞ্চল যে আর্থিক সংকটে ভুক্তভোগী এর ফলে তা এড়ানো গেছে। এর দরুন এখনও পর্যন্ত উৎপাদক অর্থনীতির ঊর্দ্ধমুখী বৃদ্ধির হার বজায় রাখার সম্ভব হয়েছে। এতে শ্রমিকশ্রেণি, কৃষক, ক্ষেত মজুর, ক্ষুদ্র উৎপাদকরা লাভবান হয়নি কিন্তু বৃহৎ বুর্জোয়াশ্রেণি ছাড়া উপকৃত হয়েছে ভারতের শহর ও গ্রামের 'বিত্তবান শ্রেণি', ভূস্বামী, পর্যাপ্ত পুঁজির মালিক, শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। ফলে নয়া-উদারপন্থী জামানায় এদের আগ্রহ বেড়েছে এবং এরাই বৃহৎ বুর্জোয়াদের প্রধান নয়া ভরসা এবং সাম্রাজ্যবাদের স্থানীয় সমর্থনের উৎস।
এটাই লাতিন আমেরিকার সঙ্গে ভারতের প্রধান পার্থক্য যা থেকে বুঝে নেওয়া যায় কেন লাতিন আমেরিকান বামপন্থা আজ ঊর্ধ্বমুখী অথচ ভারতীয় বামপন্থা সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। নয়া-উদারপন্থার লাভবান শহুরে মধ্যবিত্তের সমর্থন হারানো ভারতীয় বামেরা এবং এখনও অবধি কৃষকশ্রেণির সমর্থন জোগাড়ে অসমর্থ নতুন পরিস্থিতিতে যা দ্রুত প্রত্যাশিত।
শহুরে মধ্যবিত্তের গুরুত্ব কেবলমাত্র তার সংখ্যায় নয়। আসলে এটা সেই শ্রেণি যা থেকে শিক্ষিত, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, বিদ্বজ্জন, জনমত তৈরি করা মানুষজনদের সংগ্রহ করা হয়। এই শ্রেণি যেমন সর্বহারার মাঝে বিপ্লবী তত্ত্বের বার্তাবহ উপাদান তৈরি করে তেমনই ওই সর্বহারাদের মাঝে পুঁজির দাসত্ব তত্ত্বের বাহক উপাদান তৈরির ভূমিকাও নিতে পারে। যে-কোনো সন্ধিলগ্নে শহুরে মধ্যবিত্তর এ দুই সত্তার কোনটি প্রকট হবে অন্যান্য বহু কারণের মধ্যে তা নির্ভর করে তার নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার উপর। সুতরাং ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে বামপন্থার এক অংশে প্রভাব খাটিয়ে তাকে ঐতিহাসিক লক্ষ্যচ্যুত করে পুঁজিবাদ বিরোধী আন্দোলনের তাত্ত্বিক ক্ষতি করতে সক্ষম শহুরে মধ্যবিত্ত।
=================================================================
কেউ কেউ যুক্তি দর্শাবেন সংসদীয় রাজনীতির এটাই অবশ্যম্ভাবী ফল। সেটা কিন্তু একেবারেই অযৌক্তিক। লেনিন বরাবর এ বিষয়ে জোর দিয়েছেন যে বিপ্লবী রাজনীতি তখনই উৎকর্ষ পায় যখন বিপ্লবী শক্তিগুলি পূর্ণ স্বাধীনভাবে ক্রিয়াশীল। যে কারণে সমাজের 'বুনিয়াদি শ্রেণিদের' হয়ে সওয়াল করা দলগুলিকে সক্রিয় ভূমিকা নেবার যে স্বাধীনতা সংসদীয় গণতন্ত্র দেয় তা সংকুচিত করতে বুর্জোয়াগোষ্ঠী সদা তৎপর। সুতরাং সংসদীয় গণতন্ত্র বর্জনের পরিবর্তে বামেদের ভূমিকা হওয়া উচিত একদিকে এই সংগঠনগুলিতে অংশ নেওয়া এবং অন্যদিকে সেগুলির গণতান্ত্রিক উপাদান বর্ধিত করতে লড়াই জারি রাখা। এটি এতটাই মার্কসবাদী চেতনার সঙ্গে জড়িত যে রোজা লুক্সেমবার্গের মতো বিপ্লবীও বস্তুত চেয়েছিলেন তাঁর দোল জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নিক।
যে সংস্কার তাদের করতে হবে তা 'সাম্রাজ্যবাদ'-এর ধারণা পরিত্যাগ করে নয়, বরং তার উল্টো অর্থাৎ সেই ধারণার প্রতি আরও দৃঢ়ভাবে অনুগত থেকে। শ্রমিক, কৃষক, কৃষি শ্রমিক ইত্যাদি বুনিয়াদি শ্রেণিগুলি যাদের স্বার্থ বামপন্থীরা রক্ষা করতে চায় তারা যাতে দুর্দশার সম্মুখীন না হয়ে (সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন এবং অভ্যন্তরীণ কর্পোরেট স্বার্থের কারণে) ত্রাণ পেতে পারে সেই বিষয়ে তাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এবং তার জন্য তাদের অবশ্যই পার্টির অভ্যন্তরে বিতর্ক, আলোচনা এবং ভিন্নমতের জন্য পরিসর সুনিশ্চিত করতে হবে, যাতে এটি বৌদ্ধিক কার্যকলাপের সফল কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে, একটি একশিলীভূত সত্তার পরিবর্তে যেখানে কোনো বামশাসিত রাজ্যে আঞ্চলিক বড়োকর্তা বা আমলার আদেশে কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সেই সিদ্ধান্তকে সারা দেশ জুড়ে এর সদস্যেরা সমর্থন করে এই কাজকে বিপ্লবী দায়িত্ব মনে করে।
প্রশ্ন আসতে পারে যে সমাজগণতন্ত্রী বলতে যা বোঝায় এটা কী তাই-ই নয়? উত্তর হল 'না'। কার্ল লিবনেখট-দের সঙ্গে রোজা লুক্সেমবার্গ সমাজগণতন্ত্রকে পরিত্যাগ করেছিলেন এবং একটা সমাজগণতন্ত্রী সরকারের সৈন্যদের হাতেই মারা যান; এবং তিনি একশিলীভূত সংগঠনে বিশ্বাসও করতেন না। লেনিন এতেও বিশ্বাস করতেন না। যখন তাঁর নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী সরকার অবরুদ্ধ পরিস্থিতিই ব্রেস্ত লিতভস্ক-এর চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, বুখারিন এবং অন্যান্যদের আপত্তি সত্ত্বেও, তখন তারা কমিউনিস্ট নামে একটা তাত্ত্বিক পত্রিকা প্রকাশ করে এই চুক্তিকে আক্রমণ করার জন্য, যেটা এমনকি ঐ সময়েও বলশেভিক সরকার বা পার্টি নিষিদ্ধ করেনি। পার্টির মধ্যে ভিন্ন মতের জন্য বৃহত্তর পরিসর থাকার সঙ্গে 'সমাজগণতন্ত্র' সমার্থক নয়। কমিউনিস্টদের প্রতি সমাজগণতন্ত্রীতে রূপান্তরিত হওয়ার উপদেশটি তাই, খুব সৎ অর্থে ধরলেও, ভারতীয় এলিটদের সাম্রাজ্যবাদের সাথে 'আপস' করা এবং শ্রমজীবী জনতার থেকে দূরত্ব বজায় রাখার মানসিকতারই প্রতিফলন মাত্র।
=================================================================
একটা আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলনরূপে কমিউনিজম এমন এক সময়ে বিকাশলাভ করেছিল যখন পুঁজিবাদী দেশগুলি উগ্র জাতীয়তাবাদকে মাহাত্ম্যদানকারী এক বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত। যুদ্ধরত দেশগুলোর শ্রমিকদের যাতে লগ্নিপুঁজির স্বার্থে যুদ্ধক্ষেত্রের ট্রেঞ্চে অপরকে খতম না করতে হয়, তাই লেনিনের তোলা 'সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত করা'র স্লোগান বা শান্তির পক্ষে ইউরোপীয় শ্রমিকদের আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য রোজা লুক্সেমবার্গ-এর স্লোগান পুঁজিবাদীদের দ্বারা পুষ্ট উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকতাবাদের পতাকা উড়িয়েছিল।
যে লগ্নিপুঁজির বিরুদ্ধে তারা শ্রমিকদের সংগঠিত করছিল তা ছিল জাতীয় লগ্নিপুঁজি, ব্রিটিশ, জার্মান অথবা ফরাসি। রুডলফ হিলফারডিং তাঁর বিখ্যাত কাজ 'ডাস ফিনাঞ্জ ক্যাপিটাল'-এ যেভাবে বিশ্লেষণ করেছেন বা এরিখ মারিয়া রিমার্ক তাঁর ধ্রুপদী রচনা 'অল কোয়াইট অন দ্য ওয়স্টার্ন ফ্রন্ট'-এ যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তা অনুযায়ী এই লগ্নিপুঁজির মতাদর্শ হল 'জাতীয়তার ধারণা'-কে গৌরবান্বিত করা। সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিকতাবাদ পুঁজিবাদী উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল; এবং দেশগুলিতে জাতীয় পুঁজির আধিপত্যের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সংগঠিত করার কাজটি কমিউনিস্টদের জন্য কোনো তাত্ত্বিক সমস্যার সৃষ্টি করেনি।
সমসাময়িক বিশ্বায়নের অনিবার্য ফলস্বরূপ যা ঘটল তা হল লগ্নিপুঁজির বিশ্বায়ন যেটি আবার অন্ধ দেশপ্রেমকে নয়, বরং একটি নিজস্ব ব্রান্ডের আন্তর্জাতিকতাবাদকে মদত জোগাল। এবং সংকটের প্রেক্ষিতে বিকল্প কর্মসূচির জন্য কোনো একটি দেশের জনসাধারণকে সংগঠিত করা মানে আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজির আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা, যার অর্থ জাতীয়তাবাদেই পিছিয়ে আসা এবং সমসাময়িক লগ্নি পুঁজি কথিত আন্তর্জাতিকতাবাদের কবল থেকে একটি বিশেষ জাতি রাষ্ট্র, যেটিকে বামপন্থীরা দখল করার আশা করছে, সেটির তত্ত্বাবধানে জাতিটির বিচ্ছিন্নকরণ। এটাই বামপন্থীদের উভয় সংকটের মধ্যে ফেলছে।
=================================================================
প্রথম বাধা শহুরে মধ্যবিত্তের ভূমিকা। ভারতে কৃষকশ্রেণির সমর্থন হারাবার আশঙ্কায় শঙ্কিত পুঁজিবাদ শহুরে মধ্যবিত্তের সমর্থন নিজের দিকে টানতে সমর্থ হয়েছে। এই শহুরে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় বিশ্বায়ন ও তার নয়া উদারপন্থী নীতিতে উপকৃত। এখানকার অবস্থা লাতিন আমেরিকার মত নয় যেখানে মুক্ত অর্থনীতি বস্তুত গভীর আর্থিক সংকট তৈরি করে যারা ভুক্তভোগী কেবল শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেত মজুর নয় শহুরে মধ্যবিত্তশ্রেণিও। ভারতে নয়া-উদারপন্থার আমলে তেমন কোনো গভীর সংকট সৃষ্টি হয়নি যা শহুরে মধ্যবিত্তকে এই ব্যবস্থা সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ করতে পারে।
নয়া উদারপন্থার এই সদ্যপ্রাপ্ত সমর্থন ভিতটি ব্যাঙ্গার্থে বামপন্থী হস্তক্ষেপেরই ফল (যদিও এর অর্থ এই নয় যে বামপন্থীদের হস্তক্ষেপ ঠিক ছিল না)। মুক্ত অর্থনীতি এবং দেশি বিনিময়মূল্যে স্বাধীনভাবে বিদেশি অর্থ সম্পদে পরিণত করার প্রয়াসের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের সফল প্রতিরোধে অর্থনীতি উপকৃত হয়েছে। একমাত্র চিন ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য প্রতিটি বৃহৎ অঞ্চল যে আর্থিক সংকটে ভুক্তভোগী এর ফলে তা এড়ানো গেছে। এর দরুন এখনও পর্যন্ত উৎপাদক অর্থনীতির ঊর্দ্ধমুখী বৃদ্ধির হার বজায় রাখার সম্ভব হয়েছে। এতে শ্রমিকশ্রেণি, কৃষক, ক্ষেত মজুর, ক্ষুদ্র উৎপাদকরা লাভবান হয়নি কিন্তু বৃহৎ বুর্জোয়াশ্রেণি ছাড়া উপকৃত হয়েছে ভারতের শহর ও গ্রামের 'বিত্তবান শ্রেণি', ভূস্বামী, পর্যাপ্ত পুঁজির মালিক, শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। ফলে নয়া-উদারপন্থী জামানায় এদের আগ্রহ বেড়েছে এবং এরাই বৃহৎ বুর্জোয়াদের প্রধান নয়া ভরসা এবং সাম্রাজ্যবাদের স্থানীয় সমর্থনের উৎস।
এটাই লাতিন আমেরিকার সঙ্গে ভারতের প্রধান পার্থক্য যা থেকে বুঝে নেওয়া যায় কেন লাতিন আমেরিকান বামপন্থা আজ ঊর্ধ্বমুখী অথচ ভারতীয় বামপন্থা সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। নয়া-উদারপন্থার লাভবান শহুরে মধ্যবিত্তের সমর্থন হারানো ভারতীয় বামেরা এবং এখনও অবধি কৃষকশ্রেণির সমর্থন জোগাড়ে অসমর্থ নতুন পরিস্থিতিতে যা দ্রুত প্রত্যাশিত।
শহুরে মধ্যবিত্তের গুরুত্ব কেবলমাত্র তার সংখ্যায় নয়। আসলে এটা সেই শ্রেণি যা থেকে শিক্ষিত, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, বিদ্বজ্জন, জনমত তৈরি করা মানুষজনদের সংগ্রহ করা হয়। এই শ্রেণি যেমন সর্বহারার মাঝে বিপ্লবী তত্ত্বের বার্তাবহ উপাদান তৈরি করে তেমনই ওই সর্বহারাদের মাঝে পুঁজির দাসত্ব তত্ত্বের বাহক উপাদান তৈরির ভূমিকাও নিতে পারে। যে-কোনো সন্ধিলগ্নে শহুরে মধ্যবিত্তর এ দুই সত্তার কোনটি প্রকট হবে অন্যান্য বহু কারণের মধ্যে তা নির্ভর করে তার নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার উপর। সুতরাং ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে বামপন্থার এক অংশে প্রভাব খাটিয়ে তাকে ঐতিহাসিক লক্ষ্যচ্যুত করে পুঁজিবাদ বিরোধী আন্দোলনের তাত্ত্বিক ক্ষতি করতে সক্ষম শহুরে মধ্যবিত্ত।
=================================================================
কেউ কেউ যুক্তি দর্শাবেন সংসদীয় রাজনীতির এটাই অবশ্যম্ভাবী ফল। সেটা কিন্তু একেবারেই অযৌক্তিক। লেনিন বরাবর এ বিষয়ে জোর দিয়েছেন যে বিপ্লবী রাজনীতি তখনই উৎকর্ষ পায় যখন বিপ্লবী শক্তিগুলি পূর্ণ স্বাধীনভাবে ক্রিয়াশীল। যে কারণে সমাজের 'বুনিয়াদি শ্রেণিদের' হয়ে সওয়াল করা দলগুলিকে সক্রিয় ভূমিকা নেবার যে স্বাধীনতা সংসদীয় গণতন্ত্র দেয় তা সংকুচিত করতে বুর্জোয়াগোষ্ঠী সদা তৎপর। সুতরাং সংসদীয় গণতন্ত্র বর্জনের পরিবর্তে বামেদের ভূমিকা হওয়া উচিত একদিকে এই সংগঠনগুলিতে অংশ নেওয়া এবং অন্যদিকে সেগুলির গণতান্ত্রিক উপাদান বর্ধিত করতে লড়াই জারি রাখা। এটি এতটাই মার্কসবাদী চেতনার সঙ্গে জড়িত যে রোজা লুক্সেমবার্গের মতো বিপ্লবীও বস্তুত চেয়েছিলেন তাঁর দোল জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নিক।
No comments:
Post a Comment