রবীন্দ্রনাথ বরাবরই জোরালো ভাষায় ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা করে এসেছেন । যত দিন গেছে তা আরও জোরালো হয়েছে । এই ব্যাপারটা প্রায়ই লোকের নজর এড়িয়ে যায় । তার কারণ, তিনি বিশেষভাবে সচেষ্ট ছিলেন, যাতে ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনার সঙ্গে ব্রিটিশ কিংবা পাশ্চাত্য দেশের মানুষ এবং সংস্কৃতির বিরূপ সমালোচনা না হয়ে যায় । ইংল্যান্ডে গাঁধীকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, পাশ্চাত্য সভ্যতা সম্পর্কে তাঁর অভিমত কী, তার জবাবে তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তিটি, ("সে বস্তুটি থাকলে তো ভালই হত") রবীন্দ্রনাথের মুখ থেকে বেরোতে পারত না । কীসের প্ররোচনায় গাঁধীর এই প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, রবীন্দ্রনাথ তা বুঝতে পারতেন - সাম্রাজ্যবাদী অত্যাচারের সঙ্গে সাংস্কৃতিক আত্মম্ভরিতা যুক্ত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক দম্ভের এক চমৎকার দৃষ্টান্ত ডি. এইচ. লরেন্সের মধ্যে পাই : 'যতদিন যাচ্ছে আমি দেখে আরও বিস্মিত হচ্ছি, প্রকৃতপক্ষে প্রাচ্যের অধিবাসীরা, -- ভারতীয় এবংগ পারসিকেরা - যা কোনওদিন স্বপ্নেও দেখতে পারেনি, আমাদের ইউরোপীয় সভ্যতা তার চেয়ে কত উচ্ছে অবস্থিত । ... অতি ন্যক্কারজনক তাদের প্রতি এই মিথ্যা শ্রদ্ধার ভান, এই অবাঞ্চিত রবীন্দ্রপূজা ।' কিন্তু, তামাশার ছলেও, রবীন্দ্রনাথ পাশ্চাত্য সভ্যতাকে গাঁধীর মতো খারিজ করে দিতে পারেননি ।
No comments:
Post a Comment