Sunday, 7 August 2016

আম্বেদকর একটি সমাজতাত্ত্বিক পর্যালোচনা ১

সি কে কোলে নাম একজন সমাজ সংস্কারক ১৯২৬ সালে মুম্বাই বিধি সভায় এক প্রস্তাব রেখেছিলেন এইভাবে - সমস্ত প্রকাশ্য সামাজিক লোকালয়ে দলিতদের সমাজের মূল স্রোতের মতো মুখ্য অধিকার দেওয়া হোক । সেই সর্বজনীন অধিকারবোধের তালিকার অন্তর্গত হল যথাক্রমে বিচারালয়ের সমান অধিকার, বিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকার ও পঠন, কুয়োর জল ব্যবহারের অধিকার এবং বাজার করবার সমতা দেন প্রভৃতি । দলিতদের জন্য এর প্রতিটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা যেন বাধ্যতামূলক তুলে নেওয়া হয় । ওই আনীত প্রস্তাবের ভিত্তিতেই প্রণয়ন করা হল নতুন এক আইন । নতুন আইন মোতাবেক কোলাবার প্রসিদ্ধ 'চৌদুয়ার' জলাশয় দলিতদের ব্যবহার করবার অবাধ অনুমতি করা হল ।কিন্তু ওখানকার প্রচলিত নিয়ম মেনে পুরোনোপন্থীরা দলিতদের জল ব্যবহারে অযথা বাধা সৃষ্টি করত । তাই দলিতদের আইনী দাবির পূর্ণ কার্যকারিতার লক্ষ্যে বহিষ্কৃত হিতকারিনী সভা ১৯২৭ সালে ১৯/২০ মার্চে মাহারে এক পরিষদ তৈরি করল ।  ওই পরিষদের কর্মসূচী অনুযায়ী হাজার হাজার অস্পৃশ্য মানবমানবী একত্রিত হয়েছিলেন । ওখানে বাবাসাহেব বলেন, গণজাগরণের পর্ব সমাপ্ত হয়েছে, এখন চেতনার প্রত্যক্ষ রূপায়ণের প্রয়োজন । নেওয়া হল, সত্যাগ্রহ আন্দোলনের শপথসূচী । মহারাষ্ট্রের সমস্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রায় পাঁচ হাজার দলিত মাহার অভিযান সফল করলেন । ওই জনসভায় ১৫ বছরের দলিত থেকে ৭৫ বছরের অস্পৃশ্যদের জমায়েত ছিল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে । ... গোটা জনসভা চারভাগে বিভক্ত হল । পূর্ণ শৃঙ্খলিত মর্যাদায় তারা এগিয়ে চলল পুকুরের দিকে । ভারতীয় সমাজ সংস্কারের ইতিহাসে এই সত্যাগ্রহ আন্দোলনের বিশেষ মাহাত্ম্য আছে । বাবাসাহেব স্বয়ং গেলেন পুকুর পর্যন্ত । চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে জল স্পর্শ করলেন আর আঁজলা ভরে সেই জল পান করলেন । হাজার হাজার মানুষ আম্বেদকরের পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন । ... এদিকে গোঁড়াপন্থীরা ভেবে নিল, পুকুরের জল তো অশুদ্ধ । এদিকে বিকল্প কোনো জলের ব্যবস্থাও নেই । কীভাবে তাদের তৃষ্ণার পানীয় জল পাওয়া যায় ? তখন এই পুকুর থেকে ১০৭ ঘড়া জল তুলে নিল, ওতে মিশিয়ে দিল গোমূত্র আর গোবর । এবার ওই জল পুকুরে মিশিয়ে ঘোষণা করে দিল যে পুকুরের জল বিশুদ্ধ হয়ে গেছে । কি আশ্চর্য অসঙ্গতিময়, অজ্ঞান অন্ধ বিচারক্ষমতা আর সিদ্ধান্ত দান । মানুষের স্পর্শে অশুদ্ধ জল জন্তুজানোয়ারের বর্জ্য পদার্থের সংশ্রবে শুদ্ধ হয়ে গেল । এই ছিল তৎকালীন সামাজিক সনাতনী অভিধার স্মারক কথা ।


'আমার সংঘর্ষ তত্ত্বের বিরুদ্ধে, কোনো ব্যক্তিসত্তা বা জাতিগোষ্ঠীর বিরোধিতায় নয় । পুনের একজন ব্রাহ্মণ মহিলা এই সত্যাগ্রহে যোগদানের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন । ওঁকে আমি কীভাবে নিবারণ করব ? আমার সংঘর্ষ ব্রাহ্মণদের অন্ধ কাঠিন্যের সঙ্গে । কিন্তু প্রগতিশীল উদারনৈতিক মানবতাবাদী ব্রাহ্মণদের সহযোগিতা আমি কীভাবে এড়িয়ে যাব ?'


১৯২৭ সালের ২৫শে ডিসেম্বর সকলকে বিস্মিত করে বাবাসাহেব মনুস্মৃতির প্রসঙ্গ তুলে মাহারে ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়ন করলেন । 'মনুস্মৃতি' বলে বর্ণব্যবস্থা শাস্ত্রানুগ, শাস্ত্রসিদ্ধ । মনু সামাজিক বৈষম্য সমর্থন করেছেন শূদ্র জাতির নিন্দা করে । তাই তিনি প্রকাশ্যে জ্বালিয়ে দিলেন 'মনুস্মৃতি'। আত্মস্বাতন্ত্র্যবোধের পূর্ণ সন্ধান লাভ করতে গেলে এই গ্রন্থ প্রতি মুহূর্তের অন্তরায় । অস্পৃশ্যদের কাছে গ্রন্থটি অপমানজনক বলেই তিনি সেটিকে দগ্ধ করবার সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছিলেন । 'মনুস্মৃতি' দগ্ধ করে বাবাসাহেব সামাজিক পরাধীনতার বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন ।


নাসিকের কলারাম মন্দিরে প্রবেশ ঘিরে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সবর্ণদের মানসিকতায় বিক্ষুব্ধ হয়ে দলিতরা ১৯২৮ সালে নাসিকেই এক শীর্ষ বৈঠক করেন । বৈঠকে পৌরোহিত্য করবার জন্য ভাবা হল ডঃ বাবাসাহেবের নাম । দলিত বর্ণের উদ্দেশ্য ছিল স্বতন্ত্র মন্দির নির্মাণ প্রকল্প । কিন্তু পরিষদের অধ্যক্ষপদের স্থান থেকে বাবাসাহেব এই কর্মসূচীর বিরোধিতাই করলেন ।

তিনি বললেন, নিজের সন্তের নামাঙ্কিত মন্দির নির্মাণে কোনো সফল উদেশ্য চরিতার্থ হবে না । উল্টে গোটা ঘটনাটাই তখন ওই পরিস্থিতিতে আগুনে ঘি ঢালার মতো হিতে বিপরীত ডেকে আনবে । কেননা, অস্পৃশ্যতার কলঙ্ক নিয়ে স্বতন্ত্র দেবমন্দির গঠনে সেই সামাজিক দূরত্ব আরও স্বকৃত জটিলতা সৃষ্টি করবে । তাছাড়া এই জাতীয় মন্দির নির্মাণে ব্যয়ভার বহনের দায় বর্তাবে গরিবগুর্বো দলিতদের ওপর । আর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি হল বাবাসাহেব কোনোদিনই মানুষের চাইতে দেবতার মূর্তি পুজোয় সায় দেননি ।


১৯২৮-এ মুম্বাই-এ দেড় লক্ষ মজুর নিজেদের অধিকারের দাবী তুলে হরতাল করেছিলেন । ওই হরতালে দলিতদের ভূমিকায় ছিল উল্লেখযোগ্য প্রাধান্য আর বৈচিত্র্য । হরতাল শেষ না হলে দলিতদের আত্মহত্যা করা ছাড়া বিকল্প পথ খোলা ছিল না । তাই ওই হরতালের প্রতি সমর্থন নয় বিরোধিতা করেছিলেন বাবাসাহেব । উনি আরও সূক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করেছিলেন যে সবর্ণেরা নেতৃত্বের দিক থেকে দলিত মজুরদের শ্রমিক মজুর রূপে না দেখে শুধু দলিত রূপেই দেখে । ভেতরে ভেতরে দলিতদের জন্য দূরত্বময় ঘৃণা আর উপেক্ষাই তাদের লক্ষ্য । এমনকি দলিতদের অপমানজনক, সম্মানহানির কাজগুলোই করতে হত । তাই আম্বেদকর ভেবে নিলেন, শিক্ষা ব্যতীত দলিত-সামাজিক-জীবনের কোনো পরিবর্তিত পরিস্থিতি তৈরি হবে না ।


জাতিপ্রথার অসহনীয় রক্ষণশীলতা ভেঙে ফেলবার জন্য অসবর্ণ অন্তর্বিবাহকেই মাধ্যম হিসেবে মনে মনে স্বীকৃতি জানিয়েছিলেন বাবাসাহেব ।


বাবাসাহেব বললেন যে, কংগ্রেসীদের মতামত স্ববিরোধী । মুখে তাঁরা বলছেন, জাতপাতের ঊর্ধ্বে মনুষ্যত্বের ওপর বিশ্বাস তৈরি বাঞ্চনীয় । কিন্তু কার্যত শ্লোগান দেবার কর্মসূচীতে অন্যরকম বক্তব্য । এখানে হিন্দু সমাজ মনে করে, কেবল হিন্দু-মুসলমানেরই সমস্যা বর্তমান । কিন্তু দলিতদের কোনো সমস্যার অস্তিত্ব সম্বন্ধে তারা উদাসীন । এমনকি কোনো সমস্যা শোনবার মতো তাদের ধৈর্যও নেই । তাই ভবিষ্যতে এ দেশের গঠিত সংবিধানে দলিতদের অধিকার বোধের আর সুরক্ষা সম্পর্কে নিরাপত্তা থাকা দরকার । তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে এদেশের অস্পৃশ্যদের অধিকার ফিরিয়ে দেবেনই, এমনকি রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে তাদের হৃত সম্মানবোধ প্রতিষ্ঠা করে যাবেন । তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দেন যে ভবিষ্যতে শুধুমাত্র হিন্দুদের একচেটিয়া সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ঔদ্ধত্য মেনে নেবেন না কোনো মূল্যেই ।


বাবাসাহেব বলেছিলেন, 'মহাত্মাজী আমার কোনো মাতৃভূমি নেই ।' গান্ধীজী উত্তর দিয়েছিলেন, 'আপনার মাতৃভূমি আছে, এটিই আপনার জন্মস্থান ।' বাবাসাহেব পুনরায় বললেন, 'আবার বলছি আমার কোনো মাতৃভূমি নেই ।' গান্ধীজী অবাক-দৃষ্টিতে সপ্রশ্ন হলেন । আম্বেদকর বলেছিলেন যে কুকুরের থেকেও নিম্নমানের জীবনধারণ প্রক্রিয়ায় কেউ জন্মস্থানকে মাতৃভূমি বলে চিহ্নিত করতে পারে না ।


তৃতীয় গোলমেজ অধিবেশনে যোগদানের আগে পুনেতে আহূত এক সভায় তিনি বলেছিলেন যে 'দেশদ্রোহী', 'রাষ্ট্রদ্রোহী', 'হিন্দুধর্ম-বিধ্বংসী' বলে আখ্যাত ব্যক্তিত্বটি তিনি নিজেই । কারণ এই সমাজে জন্ম নিয়ে এই সমাজেই তাঁর মৃত্যু অনিবার্য । হিন্দুদের মন বলে কিছু নেই । ওঁরা নির্জীব । ওঁদের মন পাথর আর ইঁটের দেওয়ালের মতো দুর্লঙ্ঘনীয় । ওই দেয়ালে মাথা ঠোকাই সার হবে । ওতে মাথা চৌচির হলেও হিন্দুদের মনের কোনো পরিবর্তন হবে না ।


দলিত সমাজের পতন এবং কমজোরী আন্দোলনের জন্য দায়ী হিন্দু সমাজ । সমাজে সমান প্রবেশাধিকার পাওয়ার জন্য, ব্যক্তিগত সমান অধিকারে, মানবতায় দীক্ষিত হওয়ার তাগিদে দ্বিতীয় কোনো ধর্মে দীক্ষিত হতে পারা যায় না কি ? অর্থাৎ সমান্তরাল ধর্মচিন্তার কথায় তখন তিনি আন্দোলিত । ওই একটি বিন্দুতে যুক্তিদানের দক্ষ উচ্চারণ স্পষ্ট হল ওঁর কণ্ঠে । 'তথাকথিত হিন্দুধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করো, স্বাভিমান আর শান্তির লক্ষে অন্যত্র যাও । কিন্তু স্মরণে রাখবে, তোমার নির্বাচিত ধর্মবোধে যেন সমান অধিকারবোধ, সম আচরণ ক্ষেত্র আর সমস্তর চেতনার স্পন্দন থাকে ।' বক্তৃতার অন্তিম অংশটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর - 'আমি অস্পৃশ্য জাতিতে জন্ম নিয়েছি, এতে কোনো অপরাধ ছিল না, কিন্তু মৃত্যুর সময় আমি হিন্দুরূপে থাকব না ।'


১৯৩৫ সালে আইনমাফিক অনেক প্রদেশে নির্বাচন ঘোষণা করা হয় । দলিতদের লড়াইকে অধিক গতিময় করে তোলবার তাগিদেই তিনি 'স্বতন্ত্র মজদুর পার্টি' স্থাপন করেন । ১৯৩৬-এর ১৫ই আগস্ট 'টাইমস অফ ইন্ডিয়া'-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বাবাসাহেব বলেছিলেন দেশ শাসনে অপ্রত্যক্ষ বা প্রত্যক্ষ রীতিতে ভাগনির্ভর করে নিজের আনুকূল্য না তৈরি করে দলিত আর শোষিত বর্গের দুঃখ দূরীভূত করা যাবেই না ।অন্য কেউ দলিত বা শোষিত বর্গের কাজ করবে না । সে আশাও দুরাবহ । তাই মজুর পার্টির স্বাতন্ত্র্য আবশ্যিক । লক্ষ্য করবার বিষয় হল যে, বাবাসাহেব এখানে দলিত শব্দের স্থানে 'মজুর' শব্দের সচেতন প্রয়োগ করলেন । .... মজুরদের প্রকাশ্য সভায় বলতেন দুনিয়ায় দুই বর্গ বর্তমান - (১) বড়লোক, (২) গরীবলোক । শোষক আর শোষিত । তৃতীয়স্থানে মধ্যমবর্গ । ওদের বর্গ অত্যন্ত ক্ষুদ্র । তাই কৃষক আর মজুর নিজের অবস্থান চিহ্নিত করে নিক । জাতি ধর্ম বর্ণ নিরপেক্ষতায় মজুর সংগঠনের আবশ্যিকতা রয়ে গেছে । ডঃ আম্বেদকরজীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈপ্লবিক কর্মবিন্যাসের অন্তর্গত হল, ভারতীয় মজুরদের স্বতন্ত্র ধারণাবোধ ।


কংগ্রেসের ঐতিহাসিক 'ভারতছাড়ো' আন্দোলনের সূচনা পর্ব ঘোষিত হয় । বাবাসাহেব উল্টে বলেছিলেন - 'ছাড়ো ভারতের চেয়ে আমি নতুন ভারতের প্রতীক্ষায় থাকব ।'


'৪৭ সালের ১৪ই জুলাই ব্রিটিশ সংসদে ভারতের স্বাধীনতার প্রস্তাব আনীত হয় এবং সংবিধানসভার হাতে পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয় । সংবিধান সমিতির সিদ্ধান্তে বাবাসাহেব বাংলা বিধানসভা থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন । কিন্তু বঙ্গভঙ্গের কারণে ওঁর সদস্যপদ আপনাআপনি রুদ্ধ হয়ে যায় । সংবিধান সভায় বাবাসাহেবের মতো বড় মাপের পন্ডিতের উপস্থিতি সর্বজনস্বীকৃত । সংবিধান সভায় ওঁর প্রতিনিধিত্বের দাবীতে ডঃ জয়কর ত্যাগপত্র পেশ করলেন । মুম্বাই বিধিমন্ডলের কংগ্রেস পার্টি আম্বেদকরজীকে নির্বাচিত করেন ।


সমস্ত বিশ্বের গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখার সতর্ক অধ্যয়নে ভারতের সংবিধানকে দিতে চেয়েছিলেন স্বতন্ত্র মাত্রা । এমন এক নিরপেক্ষ রূপকার হতে চাইলেন এই কর্মী বিপ্লবী মানুষটি, যেখানে মানুষের বর্ণ, বর্গ, ভাষা বা লিঙ্গবৈষম্য কোনোভাবেই মানবতাকে আঘাত না করে । প্রতিটি মানুষের সুযোগ্য অধিকারবোধের সচেতন প্রয়োগকুশলতাকে তিনি গুরুত্ব দিতে চেয়েছিলেন ।


সংবিধানের গুরুত্ব সম্বন্ধে মতামত দিতে গিয়ে বাবাসাহেব বলেন যে ভারতীয় সংবিধানে সম্বন্বিত তত্ত্ব ওই শতাব্দীর ব্যক্তিত্বচিহ্নিত স্বতন্ত্র চেতনামাত্র । সভাগৃহের মূল বক্তব্য আর সিদ্ধান্ত সংবিধানে ব্যক্ত হয়েছে । সংবিধানের ভালো-মন্দ নির্ভর করে শাসনকর্তার প্রয়োগদক্ষতার ওপর । সংবিধান সভায় ভাষণ দেবার সময় ভারতীয় জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন । বলেছিলেন, রাজনৈতিক পার্টিগুলো রাষ্ট্রহিতের পরিবর্তে নিজেদের ক্ষুদ্র অস্তিত্ববোধের স্বার্থ দেখলে ভারতের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে । এছাড়াও তিনি আঙ্গুলি সংকেত করেছিলেন দ্বিতীয় এক অশনি নির্দেশের প্রতি । সেটি হল ব্যক্তিপূজার ধারণা । যে কোনো পরিস্থিতিতেই জনগণ ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ থেকে যেন বিচ্যুত না হয়ে যায় । আত্মমর্যাদাবোধ সমর্পন করে কোনো ব্যাক্তিমানুষকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া অনুচিত । সেই ব্যক্তিমানুষ যত বড়ই হোক না কেন, সমগ্র জাতীয়তাবোধের ঊর্ধ্বে তার গুরুত্ব নেই । নির্বোধ অন্ধ আনুগত্যময় ব্যক্তিপুজো দেশের স্বাধীন চেতনাকে আঘাত করতে পারে । বাবাসাহেব আরও স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে সামাজিক আর অর্থনৈতিক উন্নতিপ্রকল্পে জনগণের সাংবিধানিক পথকেই মর্যাদা দেওয়া কর্তব্য । অসংবিধানিকতার পদাঙ্ক অনুসরণের নাম অরাজকতার পৃষ্ঠপোষকতা । এছাড়া তিনি দেশের জনগণকে শুধু রাজনৈতিক স্বার্থবোধে লালিত হতে নিষেধ করলেন । কেননা সামাজিক অসাম্যতায় কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতার অর্থ হল স্বল্পসংখ্যক মানুষের বহুসংখ্যক মানুষের ওপর কর্তৃত্বের কায়েম করতে দেওয়া । অর্থাৎ ক্ষমতায়ণ চিহ্নিত হয়েই রইবে মুষ্টিমেয় মানুষের কুক্ষিগত স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর । 

No comments:

Post a Comment