নারীরা যতই নারী স্বাধীনতা ও পুরুষের সমান অধিকার দাবি করুন না কেন, বেকার ছেলে বিয়ে করতে তো কখনওই বিজ্ঞাপন দেন না! তবে বেকার মেয়েরা কি করে প্রত্যাশা করেন রাজপুত্তুররা তাঁদের বিয়ে করবেন? আসলে মেয়েদের চেতনার অণুতে সংস্কারের মজ্জায়-মজ্জায় ঢুকে গেছে স্বামীকে আভিজাত্যের নিদর্শন একটি বস্তু হিসেবে পরিমাপ করা, স্বামীকে নিজের চেয়ে অনেক বড় মাপের হিসেবে চাওয়া, নিজের ওপর স্বামীর স্বত্বাধিকার মেনে নেওয়া।
***********************************************************
স্ত্রীর উপর স্বামীর এমন স্বত্বাধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণ অনেক ক্ষেত্রেই স্বামীর উপর স্ত্রীর অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা। অনেক সময় সামাজিক পরিবেশগত কারণে অনেক নারী ধরেই নেন, স্বামী-পুত্র-কন্যার সেবায় জীবন উৎসর্গ করার মধ্যেই নারী জীবনের সার্থকতা। এরা অবশ্যই মধ্যবিত্ত মানসিকতার মানুষ। আপনি যখন মা হিসেবে ছেলের জামা-প্যান্ট ধোয়া, ইস্ত্রি করা, স্কুলের টিফিন তৈরি করে গুছিয়ে দেওয়া, জুতোর পালিশ ঠিক রাখা ইত্যাদি কাজগুলো করেন স্নেহময়ী জননীর মহান কর্তব্য হিসেবে, তখন একবারের জন্যেও কি ভেবেছেন আপনার এমনতর কাজ-কর্মের ফলে যৌবনে পৌঁছে আপনার ছেলে প্রত্যাশা করবে তার স্ত্রীও এমনি করে গৃহকর্ম ও শিশুপালনের কাজগুলো একা হাতেই সামলাক? সে তখন নিশ্চয়ই স্ত্রীকে গৃহকর্ম, শিশুপালন ইত্যাদি বিষয়ে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবে না। আপনার মেয়ে যৌবনে পৌঁছে আপনার প্রভাবে এটাই ধরে নেবে এসব কাজ করার একক দায়িত্ব একজন আদর্শ স্ত্রী ও মা হিসেবে তারই। এখনও আমাদের সমাজে সাধারণভাবে প্রচলিত স্ত্রী চাকুরিরতা হলেও তার উপরই বর্তায় গৃহকর্ম ও শিশুপালনের ঝক্কি। এমন এক অবস্থা সৃষ্টির জন্য দায়ভাগ পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় যেমন পুরুষের ওপর বর্তায়, তেমনই কিছুটা দায়ভাগ অবশ্যই নারীদের, যাঁরা এই ধারাকে স্থায়ী রাখার মানসিকতা সন্তানদের মধ্যে তৈরি করে চলেছেন।
***********************************************************
যৌন-মুক্তির বা যৌন স্বাধীনতার দাবি যদিও ধনতান্ত্রিক সভ্যতারই দাবি, তবু এই দাবি প্রতিষ্ঠার মধ্যেই রয়েছে ধনতন্ত্রের ধ্বংসের বীজ। কারণ, যৌন স্বাধীনতার একান্ত অনিবার্য শর্ত - সাম্য, নারী-পুরুষে সাম্য, মানুষে মানুষে সাম্য, মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। আর এই সাম্য ধনতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর ধ্বংস ছাড়া সম্ভব নয়। মুক্ত যৌন-প্রণয়ের আবশ্যিক শর্ত হওয়া উচিত অবদমনহীন, শোষণহীন, বন্ধুত্ব ও বিশ্বাস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মানবীয় সম্পর্ক।
***********************************************************
একগামী মানে অবশ্য আজীবন একজনের সঙ্গেই যৌননিষ্ঠ থাকবে - এমনটি অবশ্যই নয়। যে মানুষের জীবন বেশি গতিময়, জীবনে উত্থান-পতন বেশি, তাদের বন্ধুরাও পরিবর্তিত হতে থাকে। প্রেমিকা বা প্রেমিক একজন 'বিশেষ বন্ধু'। এই 'বিশেষ বন্ধুত্ব'ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাল্টাতে পারে। জীবনে যেমন পুরনো বন্ধুদের কেউ কেউ বিদায় নেয়, কেউ কেউ আসে -- তেমন কোনও 'বিশেষ বন্ধু' জীবনে এলে স্বাগত জানানোই উচিত।
***********************************************************
প্রেম বা দাম্পত্য জীবনের আদর্শ সম্পর্ক গড়ে ওঠার প্রাথমিক ও আবশ্যিক শর্ত যৌনতা নয়। নাহলে গণিকা ও লম্পটরাই হত সেরা প্রেমিকা ও প্রেমিকের উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত। .... প্রেম বা দাম্পত্য জীবনের প্রাথমিক ও আবশ্যিক শর্তই হলো বন্ধুত্ব, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং মতাদর্শগত মিল।
***********************************************************
রাজনীতি সচেতন, আদর্শ সচেতন, মূল্যবোধ সচেতন, আত্মমর্যাদা সচেতন, স্বাধীন মানসিকতাসম্পন্ন দম্পতিদের বিচ্ছেদ তুলনামূলকভাবে অসচেতন ও স্বল্পসচেতন দম্পতিদের চেয়ে অনেক বেশি ঘটে। দু'জনেই যখন আদর্শ-সচেতন, মূল্যবোধ-সচেতন, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন, রাজনীতি ও সমাজনীতি সম্পর্কে সচেতন তখন আদর্শগত দ্বন্দ্ব দেখা দিতেই পারে - সেটা একপক্ষের আদর্শচ্যুতির জন্যে যেমন হতে পারে, তেমনই আদর্শগত মতপার্থক্য থেকেও হতে পারে। এই দ্বন্দ্ব নিয়ে 'প্রেমিক-প্রেমিকা' অথবা 'স্বামী-স্ত্রী'র সম্পর্ক অটুট রাখা অবাঞ্ছিত মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কি?
***********************************************************
কোনটা সত্যি? হিন্দুদের ঈশ্বর-বিশ্বাস, নাকি মুসলিমদের আল্লা-বিশ্বাস? আমি যদি হিন্দু থেকে মুসলিম হয়ে যাই, তবে কি আমার ঈশ্বর সাকার থেকে নিরাকার হয়ে যাবেন? আমি ইসলাম ধর্ম ছেড়ে হিন্দু হলে আমার ঈশ্বর নিরাকার থেকে আবার বিশিষ্ট হতে বাধ্য হবে?
আমার ইচ্ছেতেই যদি আমার ঈশ্বরের রূপ সাকার বা নিরাকার হতে বাধ্য হন, তবে তো আমি আমার ঈশ্বরের চেয়েও বেশি শক্তিমান।
***********************************************************
No comments:
Post a Comment