রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ নামক সংগঠনটির সবথেকে বড়ো বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁরা ভারতীয়ত্বের কথা, জপমন্ত্রের মতো বললেও চিরন্তন ভারতবর্ষকে তাঁরা একদিনের জন্যেও স্বীকার করে না। সমন্বয়ী চেতনা, যা চিরন্তন ভারতবর্ষের প্রাণ ভ্রমরা, তাকেই তাঁরা স্বীকার করে না। তাই গান্ধীজী হত্যার দায়ে যখন ভারত সরকার এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তখন সরকারী রোষানল থেকে বাঁচতে নানা কৌশল এঁরা অবলম্বন করলেও কোনো অবস্থাতেই সমন্বয়ী ভারতের চেতনাকে আরএসএস স্বীকার করেনি একটি মুহূর্তের জন্যে। নিষেধাজ্ঞার পর্বে ভারত সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আপোষে সব কিছু মিটিয়ে নেওয়ার উদ্দেশে একনাথ রাণাডে আলাপ আলোচনা চালাতে শুরু করেন।
ভারত সরকার, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের সঙ্গে আরএসএসের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং গোলওয়ালকরের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আপোষে আলাপ আলোচনার নেতৃত্ব এই একনাথ রাণাডেই দিয়েছিলেন। সর্দার প্যাটেলের সঙ্গে আরএসএস নেতা একনাথ রাণাডের প্রথম বৈঠকটি হয়েছিল মাইসোরে বিশিষ্ট শিল্পপতি ঘনশ্যামদাস বিড়লার বাড়িতে। এর আগে থেকেই নানা স্তরে আরএসএসের সঙ্গে জিডি বিড়লার একটি সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। মূলত বৃহৎ বুর্জোয়াদের প্রতিনিধি কংগ্রেসের সঙ্গে বিড়লাদের ঘনিষ্ঠতা থাকলেও আরএসএসের সঙ্গে একটা সম্পর্ক রেখে প্রথম থেকেই চলে আসছিলেন জিডি বিড়লা।
মাইসোরে জিডি বিড়লার বাড়িতে সর্দার প্যাটেলের সঙ্গে তাঁর বৈঠকটিকে একনাথ রাণাডে 'বিশৃঙ্খলা' বলে পরবর্তী সময়ে অভিহিত করেছিলেন। প্যাটেলের পক্ষ থেকে রাণাডের উপর বার বার এই বলে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল যে, গোটা দেশের আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে সঙ্ঘের দ্বারা - এমনটাই ছিল একনাথ রাণাডের অভিযোগ (১৯৬৯ সালের ২৯শে ডিসেম্বর কন্যাকুমারীতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একনাথ রাণাডে এই অভিযোগ করেছিলেন)। এই বৈঠকে সর্দার প্যাটেলের ভূমিকা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সাক্ষাৎকারে বেশ ক্ষোভই রাণাডে প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর মতে, কোন কোন ক্ষেত্রে আরএসএস আইন শৃঙ্খলার পরিবেশের অবনতি ঘটাচ্ছে - তার নাকি কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেশের গৃহমন্ত্রী সর্দার প্যাটেল দিতে পারেননি। সাক্ষাৎকারে রানাডে বলেন যে, আগে সঙ্ঘ সম্পর্কে যেসব অভিযোগ সর্দার প্যাটেল গোলওয়ালকরকে জানিয়েছিলেন, সেইসব অভিযোগ নিয়ে তিনি (রাণাডে) যখন প্যাটেলকে বিড়লার বাড়ির বৈঠকে চেপে ধরেন, তখন সেইসব বিষয়ে স্পষ্ট কোনো জবাব দেওয়া সর্দার প্যাটেলের পক্ষে সম্ভবপর হয়নি।
নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়ে সর্দার প্যাটেলের মূর্তি প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার পিছনে সামগ্রিক ভাবে সঙ্ঘের কতোখানি সমর্থন রয়েছে, তা একনাথ রানাডের এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ্যে আসার পর আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। গান্ধী হত্যার পর সঙ্ঘের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং গোলওয়ালকরের মুক্তি প্রসঙ্গে দেশের তৎকালীন গৃহমন্ত্রী সর্দার প্যাটেলের অবশ্যই একটি সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তবে তাঁর সেই সক্রিয়তা কতোখানি সঙ্ঘের স্বার্থে আর কতোখানি প্যাটেলের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে ব্যক্তি বিরোধের জেরে তা নিয়ে একটা সংশয় খোদ সঙ্ঘের ভিতরেই আছে।
সঙ্ঘের একটি অংশ মনে করেন যে, পন্ডিত নেহেরুর সঙ্গে নিজের ব্যক্তি বিরোধের জেরে প্যাটেল ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন আরএসএসকে। কংগ্রেসের সঙ্গে সঙ্ঘের মিলনের প্রশ্নে সর্দার প্যাটেলের যে প্রস্তাব ছিল, সেই প্রস্তাব সঙ্ঘ বা কংগ্রেস দলের স্বার্থে যতো না সর্দার প্যাটেল দিয়েছিলেন, তার থেকে অনেক বেশি তিনি তাঁর নিজের স্বার্থে দিয়েছিলেন বলে সঙ্ঘ নেতৃত্বের একটি অংশ আজও মনে করেন। সঙ্ঘ নেতৃত্বের এই প্রসঙ্গে অনুমান এই ছিল যে, দক্ষিণপন্থী অবস্থানের প্রশ্নে কংগ্রেস দলের ভিতরে নেহরু লবির চাপে বেশ খানিকটা কোণঠাসা ছিলেন সর্দার প্যাটেল। তাঁর এই কোণঠাসা অবস্থাটা কাটিয়ে তুলতেই তিনি কংগ্রেসের ভিতরে সঙ্ঘকে মিশিয়ে দিতে চাইছিলেন। এই ব্যক্তিস্বার্থবাহী সর্দার প্যাটেলকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েই নরেন্দ্র মোদির অতি সক্রিয়তাকে সঙ্ঘ নেতৃত্বের একটা বড়ো অংশই খুব একটা ভালো চোখে নেয়নি।
মোদির এই অতি সক্রিয়তাকে সঙ্ঘের ভিতরে এখনো যাঁরা একনাথ রানাডে প্রমুখের একান্ত অনুগামী রয়েছেন, তাঁরা নিছক গুজরাটি অস্মিতাকে উসকে দেওয়া বলেই ধরেছিলেন। তাঁদের কাছে সঙ্ঘের উপর নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে সর্দার প্যাটেলের সঙ্গে একনাথ রানাডে বিতর্কের জেরে সর্দার প্যাটেলকে সার্বিকভাবে আরএসএসের রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরা নিয়ে বেশ কিছুটা সংশয় আছে। এই সংশয়ের নিরিখেই হয়তো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরই সর্দার প্যাটেলকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যে অতিসক্রিয়তা ছিল, তাতে এখন কিছুটা ভাঁটা পড়েছে।
ভারত সরকার, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের সঙ্গে আরএসএসের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং গোলওয়ালকরের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আপোষে আলাপ আলোচনার নেতৃত্ব এই একনাথ রাণাডেই দিয়েছিলেন। সর্দার প্যাটেলের সঙ্গে আরএসএস নেতা একনাথ রাণাডের প্রথম বৈঠকটি হয়েছিল মাইসোরে বিশিষ্ট শিল্পপতি ঘনশ্যামদাস বিড়লার বাড়িতে। এর আগে থেকেই নানা স্তরে আরএসএসের সঙ্গে জিডি বিড়লার একটি সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। মূলত বৃহৎ বুর্জোয়াদের প্রতিনিধি কংগ্রেসের সঙ্গে বিড়লাদের ঘনিষ্ঠতা থাকলেও আরএসএসের সঙ্গে একটা সম্পর্ক রেখে প্রথম থেকেই চলে আসছিলেন জিডি বিড়লা।
মাইসোরে জিডি বিড়লার বাড়িতে সর্দার প্যাটেলের সঙ্গে তাঁর বৈঠকটিকে একনাথ রাণাডে 'বিশৃঙ্খলা' বলে পরবর্তী সময়ে অভিহিত করেছিলেন। প্যাটেলের পক্ষ থেকে রাণাডের উপর বার বার এই বলে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল যে, গোটা দেশের আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে সঙ্ঘের দ্বারা - এমনটাই ছিল একনাথ রাণাডের অভিযোগ (১৯৬৯ সালের ২৯শে ডিসেম্বর কন্যাকুমারীতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একনাথ রাণাডে এই অভিযোগ করেছিলেন)। এই বৈঠকে সর্দার প্যাটেলের ভূমিকা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সাক্ষাৎকারে বেশ ক্ষোভই রাণাডে প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর মতে, কোন কোন ক্ষেত্রে আরএসএস আইন শৃঙ্খলার পরিবেশের অবনতি ঘটাচ্ছে - তার নাকি কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেশের গৃহমন্ত্রী সর্দার প্যাটেল দিতে পারেননি। সাক্ষাৎকারে রানাডে বলেন যে, আগে সঙ্ঘ সম্পর্কে যেসব অভিযোগ সর্দার প্যাটেল গোলওয়ালকরকে জানিয়েছিলেন, সেইসব অভিযোগ নিয়ে তিনি (রাণাডে) যখন প্যাটেলকে বিড়লার বাড়ির বৈঠকে চেপে ধরেন, তখন সেইসব বিষয়ে স্পষ্ট কোনো জবাব দেওয়া সর্দার প্যাটেলের পক্ষে সম্ভবপর হয়নি।
নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়ে সর্দার প্যাটেলের মূর্তি প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার পিছনে সামগ্রিক ভাবে সঙ্ঘের কতোখানি সমর্থন রয়েছে, তা একনাথ রানাডের এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ্যে আসার পর আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। গান্ধী হত্যার পর সঙ্ঘের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং গোলওয়ালকরের মুক্তি প্রসঙ্গে দেশের তৎকালীন গৃহমন্ত্রী সর্দার প্যাটেলের অবশ্যই একটি সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তবে তাঁর সেই সক্রিয়তা কতোখানি সঙ্ঘের স্বার্থে আর কতোখানি প্যাটেলের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে ব্যক্তি বিরোধের জেরে তা নিয়ে একটা সংশয় খোদ সঙ্ঘের ভিতরেই আছে।
সঙ্ঘের একটি অংশ মনে করেন যে, পন্ডিত নেহেরুর সঙ্গে নিজের ব্যক্তি বিরোধের জেরে প্যাটেল ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন আরএসএসকে। কংগ্রেসের সঙ্গে সঙ্ঘের মিলনের প্রশ্নে সর্দার প্যাটেলের যে প্রস্তাব ছিল, সেই প্রস্তাব সঙ্ঘ বা কংগ্রেস দলের স্বার্থে যতো না সর্দার প্যাটেল দিয়েছিলেন, তার থেকে অনেক বেশি তিনি তাঁর নিজের স্বার্থে দিয়েছিলেন বলে সঙ্ঘ নেতৃত্বের একটি অংশ আজও মনে করেন। সঙ্ঘ নেতৃত্বের এই প্রসঙ্গে অনুমান এই ছিল যে, দক্ষিণপন্থী অবস্থানের প্রশ্নে কংগ্রেস দলের ভিতরে নেহরু লবির চাপে বেশ খানিকটা কোণঠাসা ছিলেন সর্দার প্যাটেল। তাঁর এই কোণঠাসা অবস্থাটা কাটিয়ে তুলতেই তিনি কংগ্রেসের ভিতরে সঙ্ঘকে মিশিয়ে দিতে চাইছিলেন। এই ব্যক্তিস্বার্থবাহী সর্দার প্যাটেলকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েই নরেন্দ্র মোদির অতি সক্রিয়তাকে সঙ্ঘ নেতৃত্বের একটা বড়ো অংশই খুব একটা ভালো চোখে নেয়নি।
মোদির এই অতি সক্রিয়তাকে সঙ্ঘের ভিতরে এখনো যাঁরা একনাথ রানাডে প্রমুখের একান্ত অনুগামী রয়েছেন, তাঁরা নিছক গুজরাটি অস্মিতাকে উসকে দেওয়া বলেই ধরেছিলেন। তাঁদের কাছে সঙ্ঘের উপর নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে সর্দার প্যাটেলের সঙ্গে একনাথ রানাডে বিতর্কের জেরে সর্দার প্যাটেলকে সার্বিকভাবে আরএসএসের রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরা নিয়ে বেশ কিছুটা সংশয় আছে। এই সংশয়ের নিরিখেই হয়তো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরই সর্দার প্যাটেলকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যে অতিসক্রিয়তা ছিল, তাতে এখন কিছুটা ভাঁটা পড়েছে।
No comments:
Post a Comment